Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলু-পেঁয়াজ-চাল-আটা আরও বাড়তি, ডিমে কিছুটা স্বস্তি

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫

সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দামই কিছুটা বেড়েছে চট্টগ্রামে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাজারে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাপ ছড়ানো আলু-পেঁয়াজ ও চাল-আটার দাম আরও বেড়েছে। এসব পণ্যের দাম কেজিতে অন্তত ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ডিম গত সপ্তাহের মতোই ক্রেতাদের খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে।

বন্দরনগরীর কাঁচাবাজারে এখন শীতকালীন সবজির সরবরাহ প্রচুর। দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা করে কমেছে। কিন্তু অধিকাংশ সবজির দামই এখনো ১০০ টাকার নিচে আসেনি। বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির দাম পুরোপুরি সহনীয় পর্যায়ে আসতে আরও সপ্তাহখানেক লাগতে পারে। তবে অন্যান্য শাকসবজি ও মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে।

বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজের দাম চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই বাড়তি দেখা গেছে। নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০২ থেকে ১০৭ টাকায়। আর নগরীর বকশিরহাট বাজারসহ আশপাশের এলাকার মুদির দোকানগুলোতে খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়।

বৃহস্পতিবার পাইকারিতে মিশরের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এসব পেঁয়াজের খুব বেশি চাহিদা নেই ভোক্তাদের কাছে।

দুর্মূল্যের বাজারে চাল-পেঁয়াজের দাম বাড়লেও ডিমের দাম আগের মতোই থাকায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অবশ্য পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করেছে। তাতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও দামে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাইকারিতে এখন যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো শুল্ক দিয়ে আমদানি করা। শুল্কমুক্ত হিসেবে যেসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, সেগুলো এখনো বাজারে আসেনি। তবে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই পেঁয়াজের দাম কমতে পারে।’

বকশিরহাট বাজারের মুদি দোকানগুলোতে বগুড়ার আলু প্রতিকেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে একই আলু কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

বিভিন্ন ধরনের চালের দামও কেজিতে এক-দুই টাকা করে বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২০৭০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৩০ থেকে ৩২৮০ টাকা, হাফসিদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ১৫০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আটার দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। দুই কেজির প্যাকেট আটা ১২৫ টাকা ও ময়দা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় ব্রয়লার মুরগির ডিমের ডজন ১৫০ টাকা।

আসকার দিঘীর পাড়ের দোকানি মো. সেকান্দর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা, বস্তায় ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে। আটার দাম বেড়েছে। ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতো আছে।’

বাজারে সবজি, বিশেষ করে শীতকালীন সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত। তবে মূলা ছাড়া আর কোনো সবজির দামে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের মধ্যে দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ৩২০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ছোট মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৫৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা ও ছোলা ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর আসকার দিঘীর পাড় বাজারে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, বাঁধাকপি মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৩০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা ও ধনে পাতা ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে মূলার দাম কমে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এ ছাড়া লাল শাক, মূলা শাক, পুঁই শাক ও মিষ্টি কুমড়া শাক ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাছের দামও গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে এ সপ্তাহে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

অন্যান্য সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, পটল, বরবটি, করলা চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কচুরমুখী, বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কাকরোলের দাম প্রতি কেজি আগের মতোই ১০০ টাকা।

আসকার দিঘীর পাড়ের বাসিন্দা খোরশেদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, টমেটো খাওয়ার মৌসুম। শীতের সবজিগুলোর দাম এখনও ১০০ টাকা, কয়েকটা আরও বেশি। দাম আরেকটু কমলে আমরা স্বস্তি পেতাম। ৭০, ৮০, ৯০ টাকার নিচে সবজি নেই। দাম হঠাৎ যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় কমছে না তো! ২, ৪, ৫ টাকা করে কমলে তো আর আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না।’

মাছ-মাংসের দাম গত সপ্তাহের মতোই দেখা গেছে। বাজারে মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। আর ২৫০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ও কার্পজাতীয় মাছ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আড়াই থেকে দুই কেজি ওজনের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী, ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা, কাজলী মাছ ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ও লইট্যা মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

কাঁচাবাজার ডিমের দাম পেঁয়াজের দাম বাজার মাছ বাজার সবজির বাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর