‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব মামলা বাতিল হবে’
৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৬
ঢাকা: আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব মামলা বাতিল হবে। শুধু কম্পিউটার অফেন্স, যেটা কম্পিউটার হ্যাকিং, ছেলেমেয়ের ঘনিষ্ঠতার ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা–এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সাংবাদিকতা বা মুক্তমনা মানুষ, ভিন্নমতের মানুষের মন্তব্যের জন্য যেসব মামলা সেগুলো ফেস বাই ফেস রহিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি বাতিল হলে সাংবাদিক, সমাজসেবক, মুক্তমনা মানুষসহ যারা নানাভাবে হয়রানি ও মামলার শিকার হয়েছেন, তাদের মামলা এমনিতেই রহিত হবে।’
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও দেশ টিভি বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বক্তব্য রাখেন বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড জুরি বোর্ড চেয়ারম্যান ও ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক ও অ্যাওয়ার্ড উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন মাসুম, মনির হোসেন লিটন, মসিউর রহমান খান, মাইনুল হাসান সোহেল প্রমুখ।
ড. আসিফ নজরুল তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাংবাদিকদের এমন প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন গ্রুপ নাই, একটি মাত্র সংগঠন। এই ডিআরইউ যেন কখনো দুই গ্রুপে বিভক্ত না হয়। আর এখানেই বোধ হয় একমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন হয়েছে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও।’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি বিষয়ে এই আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার মামলা করেনি। কিন্তু যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করে আন্দোলনকারীদের শক্তভাবে দমনের কথা বলেছিল- সাধারণ জনগণ বিশেষ করে যারা পরিবার হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে- তারা মামলা করেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের আমলে আমরা যখন কোথাও অনুষ্ঠান করার জায়গা পেতাম না তখন ডিআরইউতে আসতে হতো। ডিআরইউ থেকে কখনো না শব্দটি শুনিনি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক নেতারা, যারা সাংবাদিকও না নেতাও না তারা সাধারণ সাংবাদিকদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি ও ক্ষমতার মালিক হয়েছেন। এ সকল মুখ চেনা ব্যক্তিকে কখনো ডিআরইউ’র নেতৃত্বে আসতে দিবেন না। কারণ তারা সাংবাদিকদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবে না। তারা সাগর রুনির হত্যার বিচারের আন্দোলন করতে করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা হতেও তাদের লজ্জা করেননি।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রচন্ডভাবে সাংবাদিকবান্ধব থাকার চেষ্টা করি। আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। এখনো পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকি।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অবৈধ নির্বাচনকে অব্যাহতভাবে প্রকাশ্যে সমর্থন করে, ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রকাশ্য ভাবে সমর্থন করে তাকে কী সাংবাদিক বলা যায়? এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে বেশিরভাগ সাংবাদিকই সত্য ও ন্যায়ের পথে রয়েছেন।’
এই প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘রাজধানীর পরিবেশ নিয়ে যত সংবাদ প্রকাশিত হয় তৃণমূল পর্যায়ের সংবাদ ততটা গুরুত্ব পায় না। এখন সংবাদপত্রে পরিবেশ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর পিছনে সাংবাদিকতার অবদান রয়েছে। আমাদের অনেক কাজে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে সাংবাদিকরা। আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকতা যদি নির্ভীক ও নিরপেক্ষ না হয় তাহলে দেশে গণতন্ত্র বলেন আর পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামই বলেন কোনোটিই সফল হবে না।’
এদিকে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবছর দেশ টেলিভিশনের সহযোগিতায় ৪টি ক্যাটাগরিতে ১০টি পুরস্কারের জন্য ১১জন বিজয়ীকে বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ প্রদান করেছে।
অনলাইন মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের ইয়াসির আরাফাত রিপন, দ্বিতীয় ঢাকা পোস্টের আরাফাত জোবায়ের ও তৃতীয় জাগো নিউজের তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম ডিবিসি নিউজের আদিত্য আরাফাত, দ্বিতীয় নিউজ টাইম বিডির মাসুদ মোস্তাহিদ ও তৃতীয় একাত্তর টিভির পারভেজ নাদির রেজা পুরস্কার পান।
প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর মাহমুদুল হাসান নয়ন, দ্বিতীয় ডেইলি স্টারের আহসান হাবীব রাসেল এবং তৃতীয় (যুগ্মভাবে) ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর ফারহান ফেরদৌস ও জসীম উদ্দীন হারুন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রিপোর্টে পুরস্কার পেয়েছেন সমকালের আবু সালেহ রনি।
সারাবাংলা/জি এস/এসডব্লিউ