উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কমিটি শুক্রবার (৯ নভেম্বর) সতর্ক করেছে, গাজার উত্তরাঞ্চল শিগগিরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে। ইসরায়েল এই অঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর দাবি করলেও খাদ্য সংকট ক্রমেই বিপর্যয় আকার ধারণ করছে বলে জানিয়েছে কমিটিটি।
স্বাধীন দুর্ভিক্ষ পর্যালোচনা কমিটি (এফআরসি) জানিয়েছে, ‘কয়েকদিনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নাহলে এই বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।’
বায়ডেন প্রশাসন পূর্বে ইসরায়েলকে গাজায় আরও সাহায্য পাঠানোর জন্য বললেও তা কার্যকর হয়নি। মার্কিন আইন অনুসারে, যেসব দেশ মার্কিন সমর্থিত সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দেবে সেসব দেশগুলির কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা হবে ।
ফ্যামিন রিভিউ কমিটি বলেছে, ‘যদি প্রভাবশালী পক্ষগুলো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই বিপর্যয়ের পরিমাপ ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় আমরা যা দেখেছি তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ, অপুষ্টি ও রোগে অতিরিক্ত মৃত্যু দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
‘দুর্ভিক্ষের সীমা ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছে। খুব শিগগিরি এটি ঘটবে’-বলে জানিয়েছে গ্লোবাল হাঙ্গার মনিটর।
তবে, ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলের মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কিছু ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মতে, ইসরাইল ‘জেনারেলস প্ল্যান’ নামক একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, যা ‘সামর বা মর’ ক্যাম্পেইন হিসেবে পরিচিত। যেখানে উত্তর গাজার জনসংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে এসব হামলা করা হচ্ছে।
যদিও ইসরাইল এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অস্বীকার করেছে। তবে সামরিক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই, ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তরাঞ্চলে তাদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক আন্তোনিও গুতেরেস ধারণা করেছেন যে, গাজা থেকে ইসরাইল জাতিকে এখনো নির্মূল করা যাচ্ছে না। কারণ এখানকার জনগণ তাদের বাড়ি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় ইসরাইলের অভিযানে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন এবং আরও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।
ফ্যামিন রিভিউ কমিটি (এফআরসি) তার প্রতিবেদনগুলোতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) মান ব্যবহার করেছে।
আইপিসি অনুযায়ী, দুর্ভিক্ষ তখন ঘটে যখন একটি এলাকার অন্তত ২০% মানুষ গুরুতর খাদ্য সংকটে ভুগছে, ৩০% শিশুরা তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এবং প্রতি ১০ হাজার জনে দুইজন মানুষ প্রতিদিন অনাহার বা পুষ্টিহীনতা এবং রোগের কারণে মারা যাচ্ছে।
আইপিসি অক্টোবর মাসে সতর্ক করেছিল যে পুরো গাজা উপত্যকা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেখানে সবাই রোগ, দুর্ভিক্ষ এবং মৃত্যুর কাছাকাছি বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় পৌঁছানো সাহায্যের পরিমাণ এক বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলকে সাহায্য পাঠানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত এবং আটকানোর অভিযোগে বার বার অভিযুক্ত করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সারাবাংলা/এনজে