‘সব সংস্কার করে নির্বাচনে যাব— এটা কোনো যুক্তি নয়’
৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৭
খুলনা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে দেশের সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে নির্বাচনে যাব, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আমাদের সংস্কার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার এমন কোনো জিনিস নয় যে, আজকে সংস্কার করে তা তালাবদ্ধ করে রাখবো।
তিনি বলেন, ‘দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রতিনিধি ঠিক করবে। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করলে হবে না। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, বিএনপি রাজনীতি করে জনগণের জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী সংস্কার করা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে হবে। সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে, এটাই দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা।’
শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগরীর বিএনপি আয়োজিত তিনদিনের কর্মসুচির শেষ দিনে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা’ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানের হায়নারা এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তখন আওয়ামী লীগ কোথায় ছিলেন প্রশ্ন রেখে স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কোনো ভূমিকা রাখেনি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বীর উত্তম প্রথমে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের আওয়ামী লীগ কাপুরুষের মত দেশের জনগণকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছিলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মুখে আবারো সেই একইভাবে পালিয়েছেন। বাংলাদেশকে কারা রক্ষা করেছে সেই সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। আওয়ামী লীগ কখনোই দেশের স্বার্থ রক্ষা করেনি।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭১ সালে প্রথম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আবার তিনি সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন। এসবের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনী তৈরী করে ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন। ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। দেশের মানুষ ৭ নভেম্বর আবারো জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় এনে সেই বাকশালের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাকশালী জমিদারী প্রথা থেকে বিতারিত করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়েছেন নির্বাসিত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য।’
ছাত্রদের লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘দেশের ১নম্বর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ইতিহাস জানতে পড়াশুনা করতে হবে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরে দেশে গণতন্ত্র ছিলো না। যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ যুদ্ধ করেছিলেন সেই গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করেছিলেন। ৭ নভেম্বর অভূতপূর্ব বিপ্লবের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন এদেশের সিপাহী-জনতা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষদের পরিচয় দিয়েছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের।’
৭ নভেম্বর ও ৫ আগস্ট একই সুত্রে গাথা উল্লেখ করেন এই নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা মানে ছাত্র-জনতার ব্যর্থতা। তাই বর্তমান সরকারকে সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করার আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দীর্ঘসূত্রিতাকে এদেশের মানুষ ভালোভাবে নিবেন না।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য খান রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাড. আক্তার জাহান রুকু, সাংবাদিক রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে সভাস্থলে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘প্রথম বাংলাদেশ’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি। সন্ধ্যায় জাসাসের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/এইচআই