ঢাকা: বিগত কোনো সরকারই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রবাসীরা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন, পার্লামেন্ট, বিদেশ মিশন, সামরিক বেসামরিক প্রতিটি সেক্টরে বৈষম্যহীনভাবে নাগরিক আনুপাতিকহারে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্বের বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরাম।
রোববার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্বের বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরাম আয়োজিত মিট দ্যা প্রেসে এসব দাবি জানানো হয়।
ফোরামের চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের সকল প্রবাসী বাংলাদেশের ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। আমাদের দাবিগুলো যদি কার্যকর করা হয় তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।
এ সময় প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরামের ১৩ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো-
- এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ বা রেমিটেন্স ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। সরকারের সহযোগীতা পেলে বিদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্রুত এই ব্যাপারে রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য পজিটিভ ক্যাম্পেইন শুরু করা যেতে পারে।
- প্রবাসীদের কোন রকম প্রতিনিধিত্ব আজ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন পর্যায়ে পরিলক্ষিত হয়নি। আমরা এই ব্যাপারে খুবই মর্মাহত। আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়ে এই দেশের নাজুক অর্থনীতিকে সচল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি অবহেলা ও অবমাননা। এর সমাধান চাই।
- দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন, পার্লামেন্ট, বিদেশ মিশন, সামরিক-বেসামরিক প্রতিটি সেক্টরে বৈষম্যহীনভাবে নাগরিক আনুপাতিকহারে প্রতিনিধিত্ব চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারের ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা যেন শতভাগ বাস্তবায়ন চাই।
- প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে বিগত কোনও সরকারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, আমরা ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই।
- বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানিকে আরও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আরব আমিরাত, ইউরোপ আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে আগামী ৫ বছরে আরও ২০ লাখ লোক পাঠানোর জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিতে হবে। যে বিষয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের কোটাসহ দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাচ্ছে এই ব্যাপারে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের জরুরী দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
- যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিদের হাই কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি কার্ড) প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- যতদিন পর্যন্ত এনআইডি কার্ড প্রদান না করা হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা বিদেশী পাসপোর্টকে বাংলাদেশে আইডি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
- বাংলাদেশ হাই কমিশন, যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়ার অব এটর্নি প্রদান করতে বৃটিশ পাসপোর্টকে আইডি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ বৃটিশ পাসপোর্টে নো ভিসা সিল ও জন্মস্থান উল্লেখ রয়েছে।
- যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনগুলোতে পাসপোর্ট বানাতে পুরুষদের মাথায় টুপি পড়তে দেওয়া হয় না। তা বাতিল করতে হবে।
- বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট রুটে বিমানের ভাড়া কমাতে হবে এবং ঢাকা ও সিলেটের মধ্যে অত্যধিক ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে হবে।
- ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে অন্যান্য বিদেশী বিমানের ফ্লাইট চালু করতে হবে। বিগত সালে শুরু হওয়া ওসমানী বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনালের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
- প্রবাসী বাংলাদেশীদের জায়গা সম্পত্তি বেদখল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
- ২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি আইন জীবিদের সকল মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বের বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরামের সমন্বয়ক (বাংলাদেশ) মীর মো.নসির উদ্দিন।