Tuesday 03 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুনর্বাসিতদের জায়গা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৩ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩১

পাহাড়ের ঢালে খুরুশকুলে পুনর্বাসিতদের ঘর।

কক্সবাজার: কক্সবাজার বিমান বন্দর সম্প্রসারণে পশ্চিম বাহারছড়া কবিতা চত্বর এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা ৪২২ পরিবারকে খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল এলাকায় ২০২১ সালে সরকারিভাবে পুনর্বাসিত করা হয়। সরকারের দেওয়া এই জায়গায় টোকেন অনুযায়ী ঘর বানিয়ে বাস করেন ২০টির বেশি পরিবার। সরকারের দেওয়া তাদের এই জায়গা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

পুনর্বাসিত হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া হাফেজ বলেন, আমি কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া কবিতা চত্বর এলাকায় ছিলাম। যাদের ২০২১ খুরুশকুল পূর্ব ডেইল পাড়ার পাহাড়ি ঢালে পুনর্বাসন করা হয়েছে তাদের মধ্যে আমিও একজন। সরকারের দেওয়া জায়গার টোকেন অনুযায়ী পাহাড়ের ঢালে ছোট্ট একটি জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘর করে কষ্ট অবস্থান করছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এতদিন সব স্বাভাবিক থাকলেও গত সরকার পতনের পর থেকে ওই এলাকার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট করিম আর স্বপন গ্যাংয়ের লোকজন এসে আমাদের জায়গা-ঘরবাড়ি দখল করে নিয়েছে। তারা দিন-দুপুরে অস্ত্র নিয়ে হুমকি দিচ্ছে জায়গা খালি করে দিতে। আমার ঘরটা তারা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ। এখন কোথায় যাব? তার জায়গার টোকেন নম্বর ৩৯।

একইভাবে ২৯৩ টোকেনের গোলাম কাদেরের ছেলে নুরুল হুদা জানান, আগের সরকার আমাদের এমনিতেই বেকায়দায় ফেলেছে। পুনর্বাসনের নামে পানি-বিদ্যুৎ ও ঘর ছাড়া খোলা আকাশের নিচে খাস জায়গায় পাহাড়ের ঢালে প্লট ভাগ করে থাকতে দিয়েছে। আমরা অনেক কষ্টে সেই পাহাড়ে কোনোভাবে জীবন-যাপন করছি। সম্প্রতি এই এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে।

তিনি বলেন, গত পাঁচ দিন আগে আমরা শহরের এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে আমার ঘরটি ভেঙ্গে খুলে নিয়ে যায় তারা। পরে জানতে পারি ওই খাস জায়াগার মালিক দাবিদার করিম ও স্বপন গ্যাংয়ের লোকজন এই কাজ করেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। যদিও প্রভাবশালীরা ওই জায়গাও খালি করে দিতে বলেছে।

বিজ্ঞাপন

আরেক ভুক্তভোগী আবদুর রশীদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে এসে জায়গা খালি করে দিতে বলেছে। নয়ত খুনখারাবি হয়ে যাওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে। এ অবস্থায় থাকার ঘর হারানোর পাশাপাশি নিজেদের জীবনও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।

শুধুমাত্র রাবেয়া হাফেজ, নুরুল হুদা আর আনোয়ারা বেগম নয় এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা ২০ জনের বেশি। যাদের অভিযোগ ওই এলাকার প্রভাবশালী করিম ও স্বপন গ্যাং তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত জায়গা কেড়ে নিতে চাইছে। এ ঘটনায় উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার বিমান বন্দর সম্প্রসারণে পশ্চিম বাহারছড়া কবিতা চত্বর এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা ৪২২ পরিবারকে খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল এলাকায় ২০২১ সালে সরকারিভাবে পুনর্বাসিত করা হয়। পুনর্বাসনের জমি সরকারি ১ নম্বর খাস-খতিয়ানের ৫২১৭ ও ৫৩৫৩ নম্বর দুটি দাগের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা তৎকালিন সরকারের মাধ্যমদে বরাদ্দের খতিয়ানপত্র ও ট্রেসম্যাপ করে দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৫৩৫৩ দাগের পশ্চিম প্রান্তের প্লট পাহাড়ি ঢালু জায়গায় হওয়াতে পানি-বিদ্যুতের সমস্যা হয়। কিন্তু এরইমধ্যে ওই এলাকার প্রভাবশালী করিম এবং স্বপন গ্যাং এসে ওই প্লটের লোকজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও জায়গা দখলের চেষ্টা করে। এতে অনেককে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রভাবশালীরা ওই এলাকা ছেড়ে না দিলে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে মানবেতর দিন কাটছে অন্তত ২০টির অধিক পরিবারের।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত স্বপনকে ফোনে পাওয়া না গেলেও করিমের সঙ্গে কথা হয়। করিম জানান, এই অভিযোগ সঠিক নয়।

কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন।

কাউকে কোনো ধরণের অন্যায় করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, যার যতটুকু প্রাপ্য ততটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইআ

কক্সবাজার পুনর্বাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর