আফগানদের শারজা দুর্গে সিরিজ হার বাংলাদেশের
১২ নভেম্বর ২০২৪ ০০:১৪
রান তাড়ায় নামা আফগানিস্তানের ইনিংসের তখন ৪৯-তম ওভারের খেলা চলছে। জয় থেকে মাত্র পাঁচ রান দূরে আফগানিস্তান। স্ট্রাইকিং এন্ডে আজমতউল্লাহ ওমরজাই। শরীফুল ইসলামের স্লট বলটা লং অনের ওপারে পাঠালেন দারুণ এক শটে। তবে যে প্রতাপ নিয়ে শটটা খেললেন, সেটাই যেন হয়ে রইল এই ম্যাচে আফগানদের হাইলাইটস।
রহমানউল্লাহ গুরবাজের দারুণ সেঞ্চুরি, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের দায়িত্বশীল ইনিংস আর মোহাম্মদ নবীর দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশের দেয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য দশ বল আর পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই টপকে গেল আফগানিস্তান। সিরিজ জিতল ২-১ ব্যবধানে। সব মিলিয়ে টানা তৃতীয় সিরিজ জিতলেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীরা। আরো একবার তারা মনে করিয়ে দিলেন শারজা যেন রীতিমতো তাদের দুর্গ। যেখানে চলতি বছর আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার পর বিধ্বস্ত হলো বাংলাদেশ।
শারজার স্পিন সহায়ক উইকেটে ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করা বেশ কষ্টসাধ্যই। এই সিরিজের আগের দুই ম্যাচই দিচ্ছে সেই সাক্ষ্য। প্রথম ম্যাচ আফগানিস্তান জিতেছে ২৩৫ রানের পূঁজি নিয়ে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে ২৫২ রান করে জিতেছে ৬৮ রানের ব্যবধানে। ফ্লাড লাইটের আলোয় স্পিনাররা চড়ে বসেন প্রতিপক্ষের ওপর।
কিন্তু আজ সেই হিসাব বদলে দিলেন সিরিজের আগের দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ আফগান ওপেনার গুরবাজ। দারুণ স্ট্রোকপ্লেতে করেছেন অষ্টম সেঞ্চুরি। শরীফুল ইসলামের বলে যেভাবে উইকেটে ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারছিলেন, দেখেই মনে হচ্ছিল আজ নিজের সেরা ছন্দে আছেন তিনি। তার ওপেনিং সঙ্গী সেদিকউল্লাহ আতাল নাহিদ রানার এক্সপ্রেস গতির সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে বোল্ড হয়ে ফিরলেও একপ্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন গুরবাজ। যদিও তিনি নিজেও ভুগেছেন নাহিদের গুড লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা একেকটা বল খেলতে।
দলীয় ৮৪ রানের মধ্যে রহমত শাহ-শহীদিকে হারালেও পথ হারায়নি আফগানিস্তান। ওমরজাইয়ের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে শতরানের জুটিতে গুরবাজ ম্যাচে ফেরান দলকে। সেঞ্চুরিয়ান গুরবাজকে ফিরিয়ে সেই জুটি মিরাজ ভাঙলেও বিপদ কাটেনি তাতে। ব্যক্তিগত ১০১ রানে জাকির হাসানের হাতে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে গুরবাজ ফেরার পর ব্যাট হাতে দারুণ দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলেন ওমরজাই। পাঁচ ছক্কা আর তিন চারে ৭৭ বলে ৭০* রানে হয়েছেন ম্যাচসেরা। মোহাম্মদ নবী ২৭ বলে খেলেছেন ৩৪ রানের কার্যকরী ইনিংস।
নবী উইকেটে আসার আগে গুলবাদিন নাইবকে ফিরিয়ে আশা জাগিয়েছিলেন নাহিদ। কিন্তু শেষদিকে এসে শুরুর সেই ধারটা আর ধরে রাখতে পারেননি অভিষিক্ত এই পেসার। পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে বল করে এক মেইডেনসহ এক উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র ১৩ রানের খরচায়। তার গতির সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আফগান ব্যাটাররা। নির্দিষ্ট করে বললে রহমানউল্লাহ গুরবাজ। অমন দারুণ শুরুর একটা স্পেলের পর নাহিদ নিজের শেষ পাঁচ ওভারে দিয়েছেন ২৭ রান, উইকেট পেয়েছেন একটা। নাহিদের সাথে মোস্তাফিজও নেন দুই উইকেট। এক উইকেট পেয়েছেন মিরাজ।
এর আগে টসে জিতে শারজাহর টার্নিং উইকেটে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। তানজিদ-সৌম্য গড়েন ৫৩ রানের ওপেনিং জুটি। কিন্তু দারুণ এই জুটির পরই যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে। মাত্র ১৯ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে ভেঙে পড়ে টপ অর্ডার। বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করেন মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহ। আফগান স্পিনার-পেসারদের দারুণ সামলেছেন এই দুজন। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েছেন ১৪৫ রানের জুটি।
শুরুর ধস সামাল দিতে অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মিরাজ খেলেচন ১১৬ বলে ৬৬ রানের ইনিংস। তবে অন্য প্রান্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বেশ সাবলীল ব্যাটিংই করেছেন। খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন দুজন মিলে।
ওমরজাইয়ের বলে মিরাজ আউট হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ পেতে পারতেন সেঞ্চুরিও, কিন্তু শেষ ওভারে নিজের ব্যাটিংয়ের হিসেবের গড়বড়ে ছোঁয়া হয়নি নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি। শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে ৯৮ বলে ৯৮ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংস সাজিয়েছিলেন সাত চার আর তিন ছক্কায়। তাদের এই জুটিতেই বাংলাদেশ আট উইকেটে পায় ২৪৫ রানের সংগ্রহ।
ব্যাটিং বিপর্যয় শুরু হয়েছিল ওমরজাইয়ের বলে সৌম্য বোল্ড হয়ে ফেরার পর। তানজিদের এই ম্যাচেও একই পরিণতি; উইকেটে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন আজও। নবীকে কভার দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন হাশমতউল্লাহ শহীদীর হাতে। প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা জাকির হাসান থেমেছেন মিরাজের কলে রান আউট হয়ে। ১১-তম ওভারে ওমরজাইয়র বলে পয়েন্টে ঠেলে রানের জন্য ছোটেন স্ট্রাইকে থাকা মিরাজ। তবে একটু পরই ফেরত পাঠাতে চান জাকিরকে। ততক্ষণে প্রায় মধ্য উইকেটে তিনি। পয়েন্ট থেকে দারুণ এক থ্রোতে সরাসরি স্টাম্প ভাঙেন খারোটে।
সিরিজে ধুঁকতে থাকা তাওহিদ হৃদয়ও এই ম্যাচেও নিজেকে খুঁজে পাননি। চারে নেমে ১৫ তম ওভারে রশিদ খানের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে গুলবাদিন নাইবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তিন ম্যাচ মিলিয়ে হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ২৯ রান। ওমরজাই চারটি, নবী ও রশিদ নেন একটি করে উইকেট।
সারাবাংলা/জেটি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ মেহেদী হাসান মিরাজ শারজা শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম