Monday 18 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড্রেজিংয়ের কাজে বিপর্যস্ত আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০

মানিকগঞ্জ: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং সেক্টর পাঁচদিনেও নাব্য সংকট নিরসন করতে না পারায় আরিচা-কাজিরহাট রুটের ফেরি সার্ভিসে নেমেছে বিপর্যয়। গেল শুক্রবার রাত থেকে মানিকগঞ্জের আরিচা এবং পাবনার কাজিরহাট ফেরি ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকে ছিল তিন শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। এর তিন দিন পর সোমবার (১১ নভেম্বর) নৌ রুটটিতে ফের ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, যাতায়াতের চ্যানেলে পলিমাটি পড়ে আবারও যেকোনো সময় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

নৌ পথের নাব্য সংকটের এই দুরাবস্থা কাটাতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং সেক্টরের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে চলতি মৌসুমে যমুনায় পানি কমে যাওয়ায় আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ফেরি সার্ভিসের দুরবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বোলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি কতৃর্পক্ষ।

জানা গেছে, যমুনা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে চলতি মাসে প্রথম দফায় তিন দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এরপর গত শুক্রবার রাত থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয় আরিচা-কাজিরহাট নৌ রুটের ফেরি সার্ভিস।

এদিকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলে দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্যবাহী মালামাল আনা-নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ নৌপথটি অচল হয়ে পড়ে। এছাড়া, নৌ পথ সচল করতে আরিচা ঘাট সংলগ্ন ফেরি চলাচলের মূল চ্যানেল স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে বিআইডব্লিউটিএ এর ড্রেজিং ইউনিট কাজ করলেও কাজের কোনো গতি নেই। ড্রেজিং সেক্টরে প্রযুক্তি দুর্বলের কারণেই নৌপথ স্বাভাবিক করে তুলতে পারছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব পয়েন্টে ড্রেজিং করা হচ্ছে সেখানকার মাটি সেখানেই ফেলা হচ্ছে। যার ফলে একদিকে ড্রেজিং করছে অন্যদিকে ড্রেজার দিয়ে অপসারণ করা পলি মাটি চ্যানেলে পড়ে পুনরায় ভরে যাচ্ছে। এ অবস্থার অগ্রগতি না হলে কোনো কাজে আসবে না। ফেরি চলাচলের জন্য চ্যানেলে কম করে হলেও আট থেকে সাড়ে আট ফুট পানি থাকার কথা থাকলেও সেখানে পানি রয়েছে ছয় থেকে সাত ফুটের মত। যার কারণে ফেরি লোড করে পারাপার হতে গেলে চ্যানেলে আটকে যাচ্ছে।

আরিচা ঘাটে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক নিয়ে অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক মাসুদ জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক নিয়ে রাত থেকে ঘাটে অপেক্ষা করছি। শুনেছি নদীতে নাব্য সংকটের কারণে নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের কোনো গতি নেই।

বিজ্ঞাপন

ট্রাকচালক মিরাজ মিয়া বলেন, নদীতে ট্রেজিংয়ের নামে কয়দিন পর পর ফেরি পারাপার বন্ধ রাখায় শত শত ট্রাক আরিচা ঘাটে আটকে থাকে। এতে আমাদের কতোটা ভোগান্তির মধ্যে পরতে হয় সেটা কর্তৃপক্ষ বোঝার চেষ্টা করে না। ড্রেজিংয়ের নামে তারা টালবাহানা শুরু করেছে। আমার মতো প্রায় শতাধিক ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা আরিচা ঘাটে দিনরাত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিএ এর ড্রেজিং ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আরিচা-কাজিরহাটসহ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ৩৮ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাব্যতা ঠিক রাখতে ২৪০ ফুট প্রস্থ বেসিং ও ১০ ফুট গভীরতার চ্যানেল তৈরির কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু ডুবোচরের কারণে পলি অপসারণ করতে না করতেই আবার চ্যানেল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ চ্যানেলের গভীরতা রক্ষা করা যাবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিন ধরে নাব্যতা সংকটের কারণে আরিচা ঘাটের অদূরে ডুবোচরে ফেরি চলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছিল। চ্যানেলে সাড়ে আট ফুট পানি থাকলেও ফেরি চলাচল সচল করা যেত। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ৬ থেকে সাত ফুট পানি থাকায় যানবাহনবোঝাই ফেরিগুলো আটকে যাচ্ছে। ড্রেজিং করে চ্যানেল সচল না করা পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস আগের মতো স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব হবে না।

সারাবাংলা/ইআ

আরিচা-কাজিরহাট ড্রেজিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর