Wednesday 04 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
৫৪০ দিনের কাজ শেষ হয়নি ২০০০ দিনেও

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০০ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৩:০১

দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ: দেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জে শুরু হয় দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের কাজ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। কিন্তু ছয় বছরেও কাজ শেষ হয়নি। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও অবকাঠামোর কাজ শেষ না হওয়ায় পুরনো ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সক্ষমতার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নিজেকে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের স্বজন পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কাজে দেরি করলেও কেউ কিছু বলতে সাহস করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ঠিকাদার বলছেন, অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের কারণে কাজে দেরি হয়েছে।

ঠিকাদারের এমন দাবি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ। আর প্রকৌশল দফতর বলছে, ঠিকাদারকে দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজ শেষ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ একসঙ্গে শুরু হয় ২০১৮ সালের আগস্টে। এর মধ্যেই একটি দোয়ারাবাজারের ক্যাম্পাসটি। ওই প্রকল্পের অধীন ৯১টি ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ শেষ। নতুন ক্যাম্পাসে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমও চলছে। কিন্তু দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নতুন ভবনে পাঠদান করতে পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাশে দোয়ারা-ভোগলাবাজার সড়কে পাঁচ তলা একটি একাডেমিক ভবন, চার তলার অফিস ভবন ও চার কক্ষের সার্ভিস স্টেশনসহ আরও নানা স্থাপনা নির্মাণের কাজ যৌথভাবে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহের মেসার্স ভাওয়াল কন্সট্রাকশন ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা.লি.) এবং ঢাকার এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এই দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চুক্তিতে লাইসেন্স এনে কাজ করেন ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ।

প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই একর জমির ওপর এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সেই ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদফতরের একজন সাবেক প্রকৌশলী বলেন, দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাজ যিনি করছেন, তিনি মন্ত্রীর ভাগনে পরিচয় দিয়ে দাপট দেখান। অফিসের পিওন থেকে সবাই তাকে মন্ত্রীর ভাগনে হিসেবে চিনত। এ কারণে তাকে বেশি চাপ দেওয়া যেত না। অফিসের কাউকে আমলেও নিতেন না তিনি। কাজ শেষ করার তাগাদা দিলে উলটো বড় বসকে দিয়ে ধমক দেওয়াতেন। এ কারণেই ৫৪০ দিনের কাজ ২০০০ দিনেও শেষ হয়নি।

গত জানুয়ারি মাস থেকে দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম বছর এই প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন থাকলেও শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে মাত্র ১৮৬ জন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বললেন, আমাদের উপজেলা অপেক্ষাকৃত অবহেলিত। এখানে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হচ্ছে শুনে আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দেড় বছরের কাজ সাত বছরেও শেষ না হওয়ায় দোয়ারাবাসী হতাশ। শুনেছি, ঠিকাদার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিল। এ কারণে ইচ্ছামতো কাজ করেছে।

জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এ এস এম নাঈম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২০ সালের মধ্যে এই ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর আরও প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় ২০২৩ সালে আমাকে অধ্যক্ষ নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়। জানুয়ারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি।’

অধ্যক্ষ বলেন, প্রথম বছর নিয়ম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা। কিন্তু কক্ষ না থাকায় নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিই করা যায়নি। ষষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।

যোগাযোগ করলে ঠিকাদার মাহতাবুল হাসান সমুজ তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুরুতেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। ঠিকাদারকেও মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। এই কাগজ আমার কাছে আছে। পরে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের কাজও আমাকে দিয়ে করানো হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। সব মিলিয়ে এই কাজটিতে কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছি আমি। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কোথাও আমি কোনোভাবেই দাপট দেখাইনি।’

স্কুলটির অধ্যক্ষ অবশ্য ঠিকাদারের দাবিকে নাকচ করে দিচ্ছেন। অধ্যক্ষ বলেন, ‘ঠিকাদার বলে থাকেন, জমি-জমা নিয়ে ঝামেলা ও মামলা ছিল বলে কাজ করতে দেরি হয়েছে। অথচ আমি এসে খবর নিয়ে জেনেছি, জমিতে ভবন নির্মাণে কোনো বাধা ছিল না। জমি অধিগ্রহণের টাকা পাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ ছিল। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। তবে কাজে কেউ বাধা দেয়নি।’

জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই কাজ শুরু হওয়ার পর আমি যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি এসে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দুই দফায় চিঠি দিয়েছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ না করলে ব্যবস্থা নেব।’

ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে বলেও স্বীকার করে নিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করে জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।’

সারাবাংলা/টিআর

কারিগরি শিক্ষা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দোয়াবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর