ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০৯
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের ইচ্ছাকৃত ও ব্যাপকভাবে বলপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত করছে বলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে। সংস্থাটি ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে অভিহিত করেছে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘হতাশাগ্রস্ত, ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের জোরপূর্বক বস্ত্যুচ্যুতির বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, তারা এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে যা থেকে এটি স্পষ্ট যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় জোর করে বেসামরিক লোকজনকে উচ্ছেদ করায় তো যুদ্ধাপরাধ করছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এ কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইনেও এটি গুরুতর অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল গাজা অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করে মাঝে একটি বাফার অঞ্চল করার চেষ্টা করেছে। তারা সেখানে সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করছে— এমন প্রমাণ রয়েছে।
উত্তর গাজার বাসিন্দারা বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো এবং অবশিষ্ট জনসংখ্যাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পরে তাদের গাজা শহর থেকে দুটি শহর এবং একটি শরণার্থী শিবিরকে আলাদা করে একটি চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরুষদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। আর নারী ও শিশুদের গাজা শহরের দিকে যেতে দেওয়া হয়েছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরায়েলের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং অস্ত্র বিক্রি বন্ধসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞারও আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির এর ফলে মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সময়ে মধ্যে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনে বেসামরিক নাগরিকদের অমানবিক আচরণের হাত থেকে এবং অসুস্থ ও আহত সৈন্যদের আক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসামরিক জনগণের স্থানচ্যুতি কেবল অত্যাবশ্যকীয় সামরিক কারণ কিংবা জনগণের নিরাপত্তার জন্য ঘটতে পারে। অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির বিষয়ে জাতিসংঘের নির্দেশিকা নীতিগুলোও বলছে, ব্যক্তিদের স্থানচ্যুতি হতে পারে— এমন পরিস্থিতি যেকোনো সময়ে এড়াতে ও প্রতিরোধ করতে হবে।
এই শর্ত থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল বারবার উচ্ছেদের আদেশ দিচ্ছে। তবে লেবানন ও গাজায় জোরপূর্বক বেসামরিক লোকদের বাস্তুচ্যুত করার কোনো আইনি কারণ নেই কিংবা নিরাপত্তার কোনো বিষয়ও এখানে জড়িত নেই।
ইসরায়েলি নেতারা ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী অবশ্য এই উচ্ছেদ আদেশকে ন্যায্য বলে দাবি করেছে। তাদের যুক্তি, তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করার পরিবর্তে সুরক্ষা দিচ্ছে। ইসরায়েলি নেতারা বলেন, গাজার প্রায় সব জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে কেবল সামরিক কারণ ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অংশ হিসেবে।
ইসরায়েলি বাহিনী আরও যুক্তি দিচ্ছে, যেহেতু ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী বেসামরিক জনসংখ্যার মধ্যে থেকে লড়াই করছে, তাই সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিয়েছে, যেন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এবং ওই গোষ্ঠীর অবকাঠামো, যেমন— সুড়ঙ্গপথ বা এমন স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে সামরিক ‘উচ্ছেদ আদেশ’ তাদের গুরুতর ক্ষতি করেছে। ইসরায়েল গাজার বিশাল এলাকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুল এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস করছে।
বামপন্থি ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ২০২৫ সাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অঞ্চলের থাকার আপাত অভিপ্রায় নিয়ে বিশাল এলাকার বাসিন্দাদেরকে সরে যেতে বাধ্য করছে।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর