দক্ষ চালক তৈরি প্রকল্প: মেয়াদ বাড়িয়েও বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৪
ঢাকা: বিদেশে রফতানির উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দক্ষ গাড়িচালক তৈরির উদ্যোগ নেয়। এর জন্য পাঁচ বছর সময় নিয়ে প্রণয়ন করা হয় প্রকল্প। নির্ধারিত সেই সময় প্রায় শেষ হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশের বেশি চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন বাকিদের প্রশিক্ষণ দিতে আরও দুই বছর সময় চেয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তবে সময় বাড়ালেও সেই সময়ের মধ্যে সবার প্রশিক্ষণ শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
‘দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান’ প্রকল্পে। দেখা দিয়েছে এমন চিত্র। কাগজ-কলমের হিসাব বলছে, পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের সাড়ে চার বছর শেষে বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম— মোট বরাদ্দের ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, দক্ষ চালক হতে পারলে জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়তে থাকায় দেশেও দক্ষ চালকের চাহিদা বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দুই হাজার ৪০০ জন দক্ষ চালক তৈরি করতে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো।
পরিকল্পনা কমিশনে জমা হওয়া হালনাগাদ তথ্য বলছে, প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে ১১টি ব্যাচে মাত্র ৩৮ হাজার ৫৩৩ জনকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাকিদের প্রশিক্ষণ দিতে আরও দুই বছর সময় চেয়ে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি নিয়ে গত ১১ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
সভার একটি সূত্র জানিয়েছে, সাড়ে চার বছরেও লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি এই প্রকল্পের আওতায়। সেখানে বাকি দুই বছরে কীভাবে ৬০ শতাংশ চলককে প্রশিক্ষণ দেওয় যাবে, তা নিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সভায় প্রশ্নের মুখে পড়েন। এ ছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর কথা বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউনুছ মিয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের অগ্রগতি কেন এত কম, তা নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিভাগের সদস্য (সচিব) স্যার দেশের বাইরে থাকায় আমি প্রকল্প নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’
পিইসি সভা সূত্রে জানায়, সংশোধিত প্রকল্পে নতুন প্রকল্প এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্প এলাকা হিসাবে উপজেলা পর্যায়ে নতুন ৪০টি টিটিসি অন্তভুর্ক্তির ভিত্তি ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় পিইসি সভায়।
এ ছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ কী. এ বিষয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার জন্য দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দুই বছরে অবশিষ্ট কাজ শেষ করা সম্ভব হবে কি না বা কোন কৌশলে সম্ভব হবে, সে বিষয়েও সভায় জানতে চাওয়া হয়।
এদিকে প্রশিক্ষণ চলাকালীন জনবলের সংস্থান রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ৪০টি টিটিসিতে বিদ্যমান জনবল থেকে এক জন করে বদলির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যমান টিটিসিগুলোতে প্রশিক্ষক সংকট দেবে কি না, তা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়েছে। নতুন ৪০টি টিটিসিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
যনবাহন ও প্রশিক্ষণ গাড়ি (মেরামত ও সংরক্ষণ) অঙ্গে প্রস্তাবিত দুই কোটি চার লাখ টাকা কমিয়ে ৭০ লাখ টাকা করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ অঙ্গে এক কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা কমিয়ে ২৫ কোটি ছয় লাখ টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয় অঙ্গে চার কোটি টাকা কমিয়ে ৫৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য মনিহারি অঙ্গে ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১৭ লাখ টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে পিইসি সভায় নানা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেগুলোর জবাবও দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও প্রায় ৬০ হাজার দক্ষ চালক তৈরি করা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
দক্ষ গাড়িচালক তৈরি পরিকল্পনা কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়