ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতের ১৭ বছর আজ
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৫
আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনেই বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আঘাত হেনেছিল ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডর। আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাগর পাড়ের কয়েকটি জেলার জনপদ ও অজস্র মানুষের জীবন। হারিয়ে যায় শত শত প্রাণ।
তবে এই সিডর সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছিল সুন্দরবন উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায়। সেদিন যেন প্রকৃতির বুকে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সুন্দরবন।
সিডরে কমপক্ষে ৩,৪৪৭ জন মানুষ প্রাণ হারান। তবে কিছু ধারণা অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে জাতীয় দুর্যোগ বলে ঘোষণা করেছে।
এ ঘূর্ণিঝড়ে ৮.৯ মিলিয়ন হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। এ সময় নিমেষেই তছনছ হয়ে যায় বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
সিডর আক্রান্ত এলাকায় জায়গার অভাবে গণকবর দিতে হয়। পরিচয় ছাড়াই দাফন করতে হয় শতাধিক মরদেহ। কাপড়ের অভাবে পলিথিনে মুড়িয়েও দাফন করা হয় অনেক মরদেহ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা। আর শরণখোলার মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাউথখালী ইউনিয়ন।
সাউথখালী ও রায়েন্দা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অনেক প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া মারা পড়ে ১২ হাজার গবাদি পশু। গৃহহীন হয় আট হাজার পরিবার।
এসব মানুষকে সুরক্ষা দিতে সরকার বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাগেরহাটের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে ৬২ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাঁধ নির্মাণ কাজ হস্তান্তরের পরপরই এর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দেখা দেয় ভয়ঙ্কর ভাঙন ও ব্লক ধ্বস।
নব নির্মিত বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বলেশ্বর নদ তীরবর্তী হাজারও মানুষ।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা বিশ্বব্যাংকের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে নদী শাসনের ব্যবস্থা না রাখা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়মকে দায়ি করেছেন। পাশাপাশি দ্রুত নদী শাসন করে বাঁধ রক্ষা ও দায়িদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি সূত্র জানায়, মোরেলগঞ্জ- শরণখোলায় পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের সিআইপি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। চায়নার সিএইচডব্লিউ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পায়। ২০১৬ সালের জুনে নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৯ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু বাঁধটি হস্তান্তরের পরপরই অন্তত ১০টি পয়েন্টে ভাঙন ও ব্লক ধ্বস দেখা দেয়।
ইতোমধ্যে বলেশ্বর তীরবর্তী গাবতলা, রায়েন্দা ও রাজৈর অংশে বাঁধের প্রায় তিন কিলোমিটার ঢালের ব্লক ধ্বসে গেছে।
এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ রেকি করেছেন এবং ইতোমধ্যে বাঁধের ৩৫টি গর্ত মেরামত করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ