Friday 15 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রথম পর্বের ইজতেমা আয়োজন করতে চায় সাদপন্থিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩২

রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া মুসুল্লিরা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: তাবলীগ জামাতের নিজাম উদ্দিন অনুসারী মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থি টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আয়োজন করতে চায়। গত কয়েক বছর তারা প্রথম পর্বের আয়োজক হতে না পারায় এবার বৈষম্য মুক্ত বর্তমান সরকারের কাছে প্রথম পর্বের আয়োজক হওয়ার জন্য সুযোগ চান।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মুসল্লিরা এমন দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া আগামী ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে বয়ানে ইজতেমা ও সাদকে দেশে আনার চেষ্টা করা, সরকারের কাছে ইজতেমার ময়দান ও কাকরাইল মসজিদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমান অধিকার চাওয়া হয়েছে। সাদ বিহীন গত কয়েকটি ইজতেমার কথা উল্লেখ করে এবার সরকারের প্রতি বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জুমা পূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন মুফতি উসামা, জিয়া বিন কাসেমসহ আরও কয়েকজন আলেম। এরপর মুফতি আজিম উদ্দিনের ইমামতিতে কয়েক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছেন।

মোনাজাতের পর রংপুর থেকে আসা মুসল্লি আবু সাঈদ বলেন, এবার আমরা প্রথম পর্বের ইজতেমা করতে চাই এবং মাওলানা সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আনার জন্য যা যা করা দরকার, বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকার যেন সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।

মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন নামে রাঙামাটি থেকে আসা আরেক মুসল্লি বলেন, তাবলিগ জামাত একটি অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। কিছু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক সংগঠন এটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। হেফাজতে ইসলামসহ আরও কয়েকটি সংগঠন আমাদের কাজে কোন বাধা না দিলে আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন থাকবে না। এসব সংগঠনের কারণে আজকে আমাদের দাওয়াতের কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আজকে এখানে কয়েক লাখ লোকের সমাগম হয়েছে। আমাদের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী যদি বাংলাদেশে আসেন তাহলে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোক সমাগম হবে।

মো. নুরুজ্জামান নামে রংপুর থেকে আসা মুসল্লি বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্ব আলেমকে আমরা উপস্থিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কারণ বিশ্ব আলেমের অনুপস্থিতিতে বিশ্ব ইজতেমা পরিপূর্ণ হতে পারে না। তাই বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি ইজতেমার বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী সাহেবকে অবশ্যই বিশ্ব ইজতেমায় হাজির হওয়ার সুযোগ করে দেবেন। এ ব্যাপারে অন্য কোন মহলের দ্বারা প্ররোচিত হবেন না। কিংবা কোন ব্যক্তি বা বিশেষ সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোন অন্যায্য, অন্যায় সিদ্ধান্ত নেবেন না। বর্তমান সরকারের প্রতি আমাদের এই আহ্বান থাকবে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা তাবলিগ জামাতের পালস বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন তাহলে এর পরিণতির জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন।

এদিন কাকরাইল মসজিদে দুপুর সোয়া ১২টায় জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। এরপর সাড়ে ১২টার পর মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মোশাররফ।

এ সময় কাকরাইল মোড়, মৎস্যভবণ, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব এলাকার পুরো সড়কে কয়েক লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ ও মোনাজাতে অংশ নেয়।

এদিন জুমাপূর্ব বয়ানে আলেমরা টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভী সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করা কথা বলেন। জুমার নামাজের আগে নিজামউদ্দিন অনুসারী মুফতি উসামা এবং মুফতি জিয়া বিন কাসেম বয়ান করেন। তারা আগামী ইজতেমা আয়োজনে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ইজতেমার সময়ে সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে নিরাপদে আসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সাদ কান্ধলভী ও জুবায়েরপন্থিদের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকরাইল মসজিদের নিয়ন্ত্রণে নেয় সাদপন্থীরা।

এদিন সকাল ৮টার পরে মসজিদে প্রবেশ করেন সাদপন্থিরা। এ সময় মসজিদের বাইরে কাকরাইল এলাকায় লক্ষাধিক লোকের জমায়েত হয়। এ ছাড়া কাকরাইলে আশেপাশের সব সড়ক বন্ধ করে কয়েক লাখ মুসল্লি বসে পড়েন।

তাবলিগ জামাতের বিবদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে গত ৭ বছর যাবত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের ক্ষেত্রে জুবায়েরপন্থীরা চার সপ্তাহ ও সাদপন্থীরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। যদিও বিগত সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থীরা।

গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা দুই দফায় আয়োজিত হবে। প্রথম দফার ইজতেমা শুরু হবে ৩১ জানুয়ারি এবং চলবে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি।

তবে গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে জুবায়েরপন্থীদের সমর্থক ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের সম্মেলন থেকে বলা হয়– জুবায়েরপন্থীরা টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে ১৫ নভেম্বর থেকে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর ইজতেমা কেন্দ্রিক সাদপন্থীদের কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীরা জানান, কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থীরা সারা বছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। সাদপন্থীরা আরও জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারাদেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।

এরপর বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাতে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কাকরাইল মসজিদ ও তাবলিগ বিষয়ে জরুরি বিবৃতি’তে জানানো হয়, মঙ্গলবার বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যৌথভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাবলিগের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ফলে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের বিষয়ে আগের নিয়ম মেনে নিয়ে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে দুই পক্ষ ঐক্যমত পোষণ করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমপি

তাবলীগ জামাত সাদ কান্ধলভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর