ফারুকীকে দ্রুত উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে: চরমোনাই পীর
১৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:১৬
ঢাকা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিতর্কিত উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দ্রুত উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তা-না হলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। বর্তমান সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রমের কিছু কাজে আমরা খুশি হয়েছি। তবে সকল কাজে আমরা খুশি হতে পারিনি।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ৫৫ পুরানাপল্টন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম ও দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘রাষ্ট্রের ওপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনতা, পোশাক খাতে অরাজকতা, চাকায় সেনা বাহিনীর যানবহনে হামলা, পুলিশ বাহিনী সক্রিয় না হওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা জাতির আশাকে ম্রান করে দিচ্ছে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছি যে, বিগত ১০০ দিনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে দোদুল্যমানতা লক্ষনীয়। নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে পরে তা স্থগিত করা হচ্ছে, বাতিল করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দোদুল্যমানতা চলছে। এসব দূর করতে না পারলে ঈষাণ কোণে কালো মেঘের আনাগোনা আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে।’
আমির বলেন, ‘এই সরকারের বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে বিগত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী হওয়া ও জনমানুষের যোগ বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এগুলো মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে। আপনাদের বিবেচনাবোধ ও বিপ্লবের প্রতি আপনাদের দায়বোধ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রসংস্কার করা। যাতে করে আর কখনোই কোনো স্বৈরাচার জন্ম নিতে না পারে। সেজন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, কিন্তু কমিশনগুলো গতিশীল হয়নি। কমিশনগুলো গতিশীল করতে হবে। কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করুন। কারণ, তারাই দীর্ঘমেয়াদে জনমত ধারণ করেছে এবং আগামীতেও করবে। তাই সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক দল, ওলামা শ্রেণি এবং বিভিন্ন পেশা ও স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করুন। সংস্কার নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মধ্যে কানাঘুষা তৈরি হয়েছে। এই কানাঘুষা সংস্কারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘সাধারণ মানুষ রাজনীতি চায় না। তারা খাদ্যের নিশ্চয়তা চায়, জীবনের নিরাপত্তা চায়। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই সব আওতার বাইরে। দ্রব্যমূল্য বহু আগেই নাগালের বাইরে চলে গেছে। সংসার চালাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে আরও আগে থেকেই। স্বৈরাচারের পতনের পরে মানুষ ভালো কিছু আশা করেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। এটা মানুষকে হতাশ করেছে। সেজন্য বলবো, যে কোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন। শক্তহাতে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিন, বাজার কারসাজি দমনে শক্ত অবস্থান নিন। মনে রাখবেন এই দ্রব্যমূল্যই আপনাদের প্রতি জনসমর্থন কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।’
তিনি বিএনপির নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের শীর্ষ নেতারা মানবতা বিরোধী, খুনী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন নিষিদ্ধের বিরোধিতা করছেন। যে মুজিবকে দেবতা বানিয়ে স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই মুজিবের ছবির প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন। কেউ আবার খুনি ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন, তাদেরকে ফ্যাসিস্ট বলায় অনিহা প্রকাশ করছেন। তাদের এই অতি উদারতা, অতিরাজনীতি বা অতি সুশীলপনার নিন্দা জানাচ্ছি। কোনো খুনিকে ক্ষমা করার অধিকার একমাত্র নিহত ব্যক্তির অভিভাবকের। চোরকে চোর বলাই ইনসাফ। ফ্যাসিস্টকে ফ্যাসিস্ট বলাই ইনসাফ। ভবিষ্যৎ রাজনীতির ধান্ধা বা বিদেশি কোনো শক্তিকে খুশি করার জন্য যারা জনতার রক্তকে অবহেলা করবে তারাও খুনি ও ফ্যাসিস্টের পুনর্বাসনের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় যাচ্ছেন, সেই নিশ্চয়তা তারা কোথায় পেলেন? আবার তারা ক্ষমতায় গেলেও জনতার কাঙ্খিত সংস্কার করবেন তার নিশ্চয়তা কি? গত ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং তাদের হাত ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের জন্মের সূচনা কি বিএনপির ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বল্প প্রয়াসের ফসল নয়? বিএনপির ইতিহাস কি তাদের ওপরে আস্থা রাখার মতো ভরসা দেয়? সেজন্যই আমরা আগে সংস্কার এবং স্বৈরাচারের উত্থানরোধে সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজনের আলাপ তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আমির বলেন আমরা, ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে গত ১৬ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এর পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন, সেজন্য তাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি যে, বিএনপি এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছে। তাদেরকে বলবো, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনই স্বৈরাচার হওয়ার পথ তৈরি করে দেয়। ক্ষমতা যাতে কোনো একক দলের হাতে একিভূত না হয় সেজন্যই এই পদ্ধতি প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, আপনারা যেমন রাজনৈতিকভাবে স্বৈরাচার বিরোধী, তেমনি মানসিক ও পদ্ধতিগতভাবেই স্বৈরতন্ত্র বিরোধী। তাই যদি হয় তাহলে আপনারাও পিআর পদ্ধতির প্রতি সমর্থন জানাবেন বলে আশা করছি।’
তিনি বিপ্লবে অংশ নেওয়া সকল রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়ে ‘জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ’ গঠন করার দাবি জানান। কারণ সংবিধানসহ রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষেত্রে সংস্কার, বৈদেশিক সম্পর্ক নির্মাণ, স্বৈরতন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিচারসহ জাতির সামনে করণীয় কাজের গুরুত্ব বিবেচনায় একটি সাধারণ রাজনৈতিক ঐক্যমত জরুরি। যা বহু জটিলতা থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে এবং জরুরি বিষয়গুলোতে সাধারণ ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।’
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম আমির অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি নির্বাচনি পরিকল্পনা ঘোষণার দাবি জানান এবং আগামী দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেন। কারণ অনিশ্চয়তা ও শুণ্যতা নানা ধরণের জটিলতার জন্ম দেয়। তা রোধ করার জন্য, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিস্থিতি তৈরিতে করণীয় নির্ধারণ, তার সময়সীমা ঠিক করে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ঘোষণা করা হলে সকলের জন্য কাজ করা সহজ হবে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর সৈয়দ মোসাদিক বেলাল মাদানী, যুগ্ম মহাসচিব আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই