‘গুম-খুন-গণহত্যায় জড়িতদের বিচার হবে আন্তর্জাতিক আদালতেও’
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার কেবল দেশে নয়, আন্তর্জাতিক আদালতেও করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক, ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেবল দেশে নয়, গুম-খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌঁসুলী করিম খানের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে এরই মধ্যে কথা হয়েছে।’
রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে তিনি এ ভাষণ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন, ‘অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে (আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে)। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশনপ্রধান আমাকে জানিয়েছেন, অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা, এই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’
গুমের শিকার ব্যক্তিদের গুমসংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ দিতে উৎসাহ দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা আবার আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।’
গুমের শিকার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-আগেস্টের বিপ্লবের পর ছাত্র-ছাত্রীরা শহর বন্দরের দেয়ালে-দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদেরও আগে যারা গুমের শিকার হয়েছে, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে-দেয়ালে তারা লিখে গেছেন রেখেছেন তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাদের এসব কষ্টের কথা শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবই।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কিংবা অন্য কেউ যেন হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা আমাদের তাদের রিপোর্ট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অতীতের গুমের ঘটনাগুলো তদন্তকাজেও আমরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা করতে ঢাকায় তারা তাদের জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।’
ভাষণে সরকারের ১০০ দিনের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক বিভিন্ন তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন।
সারাবাংলা/টিআর/পিটিএম