ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান: টিআইবি
১৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:০৪
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘নতুন বাংলাদেশ’: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদন তৈরিতে যুক্ত ছিলেন মো. জুলকারনাইন, ফারহানা রহমান ও মো. মোস্তফা কামাল।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ৫ আগষ্টে ছাত্র জনতার আআন্দোলনের পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে জেন্ডার, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র হুমকীর মুখে পড়েছে। যা বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের মূল্যায়ন করে তৈরি সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো কোনো মহলের অতিক্ষমতায়ন ও তার অপব্যবহার এবং চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। যা অসাম্প্রদায়িক সম-অধিকারভিত্তিক ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ অভীষ্টের অন্তরায়।
প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণ, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও সমালোচনার সুযোগ সার্বিকভাবে মুক্ত পরিবেশ ও বাক-স্বাধীনতার পরিচায়ক বিবেচিত হলেও একদিকে কোনো কোনো মহলের অতিক্ষমতায়ন ও তার অপব্যবহার, এবং চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অসাম্প্রদায়িক সম-অধিকারভিত্তিক ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের পথে অন্তরায়।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান- অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে জেন্ডার, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে, যা বৈষম্যবিরোধী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
ভারত কর্তৃক কর্তৃত্ববাদ পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকারে ব্যর্থতার পাশাপাশি বরং উত্তরণ প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করতে ভারত থেকে পতিত সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড সর্বোপরি ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরকার ও দেশের জন্য উদ্বেগজনক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন, এবং অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার আশ্বাস ও ঘোষণা এই সরকার তথা আন্দোলনের অভীষ্টের প্রতি আস্থার প্রকাশ। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সহায়তা, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ’র মতো সংস্থার ঋণ সহায়তা প্রয়োজনীয় বিবেচিত হলেও সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি ও বিশেষ করে ইতোমধ্যে সুদসহ ঋণের ভারে জর্জরিত দেশবাসীর ওপর অতিরিক্ত বোঝার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা ও আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। জুলাই-আগষ্টে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার শুরু হয়েছে, তবে হতাহতদের সংখ্যা নিয়ে তারতম্য দেখা গেছে।
এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রসীদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবেক সরকারের সময় দায়ের করা মামলা ও রায় থেকে অব্যহতি এবং দণ্ড মওকুফের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নতুন বাংলাদেশে দুটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। তার একটি হল রাষ্ট্র সংস্কার, আরেকটি হলো নতুন রাজনৈতিক সামাজিক সমঝোতা। এই লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখেই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। সরকারের কাজ কোথায় কী হচ্ছে, সেইগুলো চিহ্নিত করাও আমাদের দায়িত্ব।
সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ