একদিকে গাজা-ইসরায়েল-লেবানন, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন— সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহতা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে যুদ্ধ-বিগ্রহে জড়িয়ে পড়া এলাকা। এক গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে সেই ভয়াবহতার চিত্র। তাতে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে সংঘাতে জর্জরিত বিশ্বের অনুপাত ৬৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) গার্ডিয়ান ভেরিস্ক ম্যাপলেক্রফটের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সেখানেই এই তথ্যগুলো ওঠে আসে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে পৃথিবীর ৬ দশমিক ১৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার বা ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন বর্গমাইল ভূখণ্ড সংঘাতে জড়িত। এই পরিমাণ বিশ্বের মোট ভূখণ্ডের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালেও বিশ্বের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ভূখণ্ড সংঘাতে জড়িত ছিল। সে হিসাবে তিন বছরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ভূখণ্ডের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য আরও বলছে, যুদ্ধ এলাকার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাও। তিন বছরের ব্যবধানে যুদ্ধে নিহতের হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ২০২১ সালের পর থেকে ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ মোট ২৭টি দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঝুঁকি বেড়েছে।
ঝুঁকি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ভেরিস্ক ম্যাপলেক্রফট প্রকাশিত দ্বন্দ্বের তীব্রতা সূচক (সিআইআই) অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ইউক্রেন, মায়ানমার, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের আশপাশে একটি অঞ্চলে যুদ্ধ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে তা আরও তীব্র হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় বিশ্বব্যাপী সংঘাতের মাত্রা কমেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে এক দশক ধরে সহিংসতা হার ক্রমবর্ধমান। পাশাপাশি বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী সংকটও নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান।
ভেরিস্ক ম্যাপলেক্রফটের গবেষণা পরিচালক হুগো ব্রেনান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সংঘাতগুলো ব্যবসা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় শস্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে লোহিত সাগরে ইয়েমেন হুথি বিদ্রোহীদের দ্বারা।’
ব্রেনান আরও বলেন, ‘সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে চলমান সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব নিয়ে ভাবতে হবে। আপনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো দেখুন। দেখবেন, সুদানে যার কোনো কারখানা নেই, তিনি সুদানের সংঘাত নিয়ে মোটেও ভাবিত নন। তবে সরবরাহব্যবস্থা ব্যহত হওয়ার কারণে এমন দূরবর্তী স্থানের সংঘাতও কিন্তু আপনাকে প্রভাবিত করে।’
প্রতিবেদনে সাহেল ও হর্ন অব আফ্রিকাসহ মালি থেকে সোমালিয়া পর্যন্ত এলাকাকে ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে গত তিন বছরে সহিংসতা দ্বিগুণ হয়েছে। বুরকিনা ফাসোর ৮৬ শতাংশ এলাকা এখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সুদান ও ইথিওপিয়া বড় আকারের সহিংসতার প্রাদুর্ভাব দেখেছে।
চিলড্রেনস ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালের সিইও অ্যাঞ্জেলা রোজালেস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ৪৭ কোটিরও বেশি শিশু যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেন, সুদান, গাজা ও লেবাননে যুদ্ধের ভয়াবহতায় প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
রোজালেস আরও বলেন, ‘সংঘাতে আক্রান্ত এলাকার শিশুরা তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। মা-বাবাকে হারিয়েছে বা সহিংসতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এসব শিশু অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’