‘বাতিল হতে পারে’ রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেলিযোগাযোগ স্থাপন প্রকল্প
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৮
ঢাকা: দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। এ অবস্থায় বাতিল হতে পারে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পটি।
এরই মধ্যে ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অনুমোদন না মেললে বাতিল হতে পারে প্রকল্পটি। এমনটি জনা গেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, শুধু ব্যয় বৃদ্ধিই নয়, সেইসঙ্গে দুই বছরের বেশি মেয়াদ বাড়ানোরও প্রস্তাব রয়েছে। ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, রাশিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের শর্ত প্রতিপালন সম্ভব না হওয়ায় ক্রয় চুক্তি করা যায়নি। ফলে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় যন্ত্রপাতির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আছে নতুন কাজের অন্তর্ভূক্তিও। এসব কারণে মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় শূন্য অগ্রগতি বিরাজ করছে প্রকল্পটিতে। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৩৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৭২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৯১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। তবে গত মার্চ মাস পর্যন্ত এটির আওতায় খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ফলে আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ।
এদিকে, প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ে অগ্রগতি কম হওয়ায় নানা কারণে এখন ২০২৬ সালেরর জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নেটওয়ার্ক ডিজাইন চূড়ান্তকরণ কাজে রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ফি পরিশোধে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়। যেগুলো প্রতিপালন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ক্রয় সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও চুক্তি করতে না পারায় দীর্ঘ সময় চলে যায়।
এছাড়া তিনটি এনটিটিএন অপারেটরস থেকে আইআরআই ভিত্তিতে অপটিক্যাল ভাইবার লিজ নেওয়া বাবদ চাহিদা করা ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপিতে উল্লেখ করা ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এদিকে যখন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় তখন বৈদেশিক যন্ত্রপাতি খাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ছিল এক ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ৪০ পয়সা। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বেড়ছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। এ কারণে যন্ত্রপাতি খাতে ব্যাপক দাম বেড়েছে।
সূত্র জানায়, মূল ডিপিপিতে না থাকলেও চাহিদা, কারিগরি ও সেবাজনিত কারণে টেলিকম সরঞ্জামাদি ও সিকিউরিটি ইক্যুপমেন্টের সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। সিকিউরিটির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সংশোধনী প্রস্তাবে সব লেয়ারে নতুন করে সিকিউরিটি যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে আরও নতুন নতুন অনেক কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ক্রয় পরিকল্পনায় আর্থিক ক্ষমতা অর্পন, বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নাম এবং পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী ক্রয় প্যাকেজের সুনিদিষ্ট পরিমাণ ও সুনিদিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত যে ব্যয় হয়েছে তার উপযুক্ত প্রমানাদি, এমটিবিএফ (মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো) প্রত্যয়ন ও অর্থায়ন পরিকল্পনা আরডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। যেসব খাতে ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটির অগ্রগতি শুন্য থাকায় একনেকে উপস্থাপন করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এরকম প্রকল্প চলমান রাখতে চায়না অন্তবর্তীকালীন সরকার।
সারাবাংলা/জেজে/এসআর