এলডিসি উত্তরণে চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থ উপদেষ্টা
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৪২
ঢাকা: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু জমি ও সম্পদ কম। এর মধ্যেও এলডিসি উত্তরণ একটি বড় ঘটনা। এলডিসি উত্তরণে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে মধ্য আয়ের দেশে যাওয়া অর্থবহ হবে না। আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। অটোমেশনে যেতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে দক্ষতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। এলডিসি উত্তরণে জনগণের জন্য শোভন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি,সামাজিক বৈষম্য দূর করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সেসব কাজ করছে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্রাজুয়েশন প্রকল্পের ‘বাংলাদেশ স্মোথ গ্রাজুয়েশন স্ট্রাটেজি’-এর খসড়া নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিটেন্টালে এ কর্মশালার আয়োজন করে যৌথভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও ইএনডিপি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে আমরা যে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি, এলডিসি উত্তরণের পর সেটি থাকবে না। আমাদের পোশাক ও ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সেজন্য আমাদের পিছিয়ে থাকলে হবে না। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জিএসপি প্লাস সুবিধা নেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবন্ধ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে দেওয়া হবে। বর্তমানে আর্থিক খাতে সংস্কার হচ্ছে। কিছু সংস্কার অর্জিত হয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে আছে। আমরা আশা করছি, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এখন আমরা যেসব সংস্কার করছি সেগুলো পরবর্তী সরকারের জন্য ইতিবাচক পদচিহ্ন হয়ে থাকবে। এছাড়া আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছি। আমাদের ব্যক্তিগত কোন এজেন্ডা নেই।
ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উদদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূল্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, ইউএনডিপির আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস ও ইউএন কসিমটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির সদস্য ট্যাফিয়ার টেসফিসিউ। অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইআরডির এইড ইফেকটিভনেস ইউনিটের উইং চিফ এএইচএম জাহাঙ্গীর।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড.এমএরাজ্জাক। প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন জাইকার রিপ্রেজেনটেটিভ হিচিগুচি তমোহিদো, বাংলাদেশ ফুটওয়্যার এক্সপোর্টস এন্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিম মঞ্জুর।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি অর্জন করেছে। ইউএনডেসা বাংলাদেশকে সঠিকভাবেই মূল্যায়ন করছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে। এরপর যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার। এক্ষেত্রে উৎপাদন শীলতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ, উৎপাদিত পণ্যের মান বাড়ানো, রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রৈ শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা কমানো এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) সম্পন্ন করা দরকার। পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো, দেশে ব্যবসার খরচ কমানো এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। এগুলোর দিকে নজর দেওয়া না হলে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার আশংকা আছে।
বক্তারা আরো বলেন, দারিদ্র্য নিরনের মাধ্যমে বৈষম্য কমাতে হবে। গত জুলাই-আগষ্ট মাসে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে তার মূল কথাই ছিল বৈষম্য দূর করা। সেই চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এলডিসি উত্তরণ শুধু যে চ্যালেঞ্জর তা নয়, পাশাপাশি সম্ভাবনাও তৈরি করবে। কিন্তু আমাদের কাজ হবে সেই সম্ভাবনাগুলেকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই কৌশল কার্যকর করতে যথাযথ উদ্যোগ থাকতে হবে।
তারা বলেন, এলডিসির সহজ উত্তরণের ক্ষেত্রে শুধু পোশাক শিল্প নির্ভর রপ্তানির দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। পোশাক শিল্পের বাইরে ওষুধ, পাট, চামমড়াসহ অন্যান্য অ-পোশাক শিল্পকেও প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে পোশাক খাত যেসব সরকারি সুবিধা পায় সেরকম সুবিধা অন্য খাতগুলোতেও দিতে হবে। এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বেসরকারি অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরী। এক্ষেত্রে দেশের ব্সেরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের কার্যকর ভূমিকা দরকার। দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে বিডা, বেজাসহ সরকারি যেসব সংস্থা কাজ করছে সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস