Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবি নজরুল-সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে ১৫ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জবি করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৬

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে রোববার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: সারাবাংলা

চিকিৎসকের গাফিলতিতে সহপাঠীর মৃত্যু, লাশ আটকে রাখা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পুরান ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘেরাও করেছেন ঢাকার বেশ কয়েকটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজের প্রধান ফটকও ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি ভাঙচুর চালানো হয় কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকলে কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ এলাকায় অবস্থান করছিলেন।

ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) এইচএসসি ব্যাচ ২০২৪-এর শিক্ষার্থী অভিজিৎ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনেন তার বন্ধু-স্বজন-সহপাঠীরা। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীসহ বন্ধুরা বিক্ষোভ করেছিলেন। পরে এ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, নটরডেম কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ (ডিএমআরসি), ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১টার দিকে ন্যশনাল মেডিকেল কলেজ ঘেরাওয়ে অংশ নেন। এ সময় তারা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের প্রধান ফটক, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভেতরে ভাঙচুর চালান।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘গতকাল রাত পর্যন্ত মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তিনি বলেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে তার কথা বলেছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই জানিয়েছেন, কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু আজ (রোববার) দুপুর সোয়া ১টার দিকে কিছু বোঝার আগেই সিসিটিভিতে দেখি প্রচুর ছেলেমেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামতো ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কলেজ শিক্ষার্থীদের। ছবি: সারাবাংলা

অধ্যাপক কাকলী আরও বলেন, ‘আজ আমাদের কলেজে পরীক্ষা ছিল। ওরা মার্কশিট, খাতা, ল্যাপটপ সবকিছু নিয়ে চলে গেছে। আমি ঢাবিতে জানিয়েছি। উপাচার্য বলেছিলেন আবেদনপত্র পাঠাতে। ভাঙচুরের জন্য তাও পাঠাতে পারিনি।’

কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটি ‘আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরের ঘটনা না। আমাদের পরীক্ষা চলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা গেটগুলো বন্ধ রেখেছি। আমি আর কিছু এখনই বলতে চাচ্ছি না।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিজিৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। তার রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে পরিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চায়। কিন্তু ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল বাধা দেয়। অভিজিৎ মারা গেলে টাকা দাবি করে তার লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০ নভেম্বর ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়েও তার মরদেহ বুঝে পাননি। পরে তারা বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরদিন ২১ নভেম্বর ডিএমআরসি শিক্ষার্থীরা আবার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে গেলে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হন।

এর প্রতিবাদে প্রায় ৩০টি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ চলাকালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও শহিদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজে ভাঙচুর চালান।

কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা বিষয়ে ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী হাসান বলেন, ‘আমাদের এক বড় ভাই ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিল। অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চেয়েছিলাম। তারা দেয়নি। বলে, ভাই সুস্থ আছেন। কিন্তু রাতে ইনজেকশন দেওয়ার পর ভাই মারা গেছেন বলে জানায়। ভাইয়ের লাশ আনতে গেলে আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক লাখ টাকা দাবি করে।’

হাসানসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে সদরঘাটের টোকাই পোলাপান এবং কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের কিছু শিক্ষার্থী আমাদের ওপর হামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজ ঢাকা শহরের সব কলেজের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে হয়েছি।’

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিল বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি বিষয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার বলেন, ‘অভিজিতের অবহেলাজনিত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার বলেছে, তারা তদন্ত করবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপের মুখে রাখা হয়েছে। আজ ছাত্র প্রতিনিধি ও মৃতের বাবার সঙ্গে হাসপাতালে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু আমরা জানতে পারি, তারা আসেনি। এদিকে আজ ফের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের দিকে এসেছে।’

সারাবাংলা/টিআর

কবি নজরুল কলেজ ড. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ সোহরাওয়ার্দী কলেজ

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর