Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহাসড়কে বন্ধসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৯

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: জরুরি ভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ছোট যানবাহন চলাচল নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স দেওয়া গেলে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

একইসঙ্গে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা জাতীয় মহাসড়কে চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করা, রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং জরুরি ভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জরুরি ভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, রিকশা-ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলার যানবাহন মালিক ও চালক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিদ্দিক মিয়াসহ অনান্যরা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে দেশে ইজিবাইকের বিস্তার লাভ করলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এখাত নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নানান ফোরামে প্রস্তাব তুলে ধরে। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সারাদেশে ৪০ লাখ অটোরিকশা থেকে দৈনিক ১১০ কোটি টাকা বছরে প্রায় ৪০ হাজাত কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি হয়েছে। এই চাঁদাবাজির কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ দেশের সকল সড়ক-মহাসড়ক, নগর-বন্দরে মোটরচালিত অটোরিকশা দৌরাত্ব বেড়ে চরম আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের অনেক এমপি, মন্ত্রীও এই অবৈধ অটোরিকশা পরিচালনা করে অবৈধ চাদাঁবাজিতে যুক্ত ছিলেন, তাই এ খাত নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অবাধে আমদানি স্থানীয় গেরেজে সহজলভ্যভাবে তৈরি করে সহজে রাস্তায় নামানোর অবাধে সুযোগ থাকায় এবং দেশে অন্যান্য খাতে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, স্বল্পপুঁজিতে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ অটোরিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এতে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকটসহ দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রশিক্ষণবিহীন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের হাতে এসব অটোর স্টিয়ারিংয়ের কারণে সড়ক নিরাপত্তায় ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি দেশের হাসপাতালগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তির চিত্র পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, থ্রি- হুইলার, ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বাড়ছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, সাবেক সরকার ২০২১ সালে “থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১’ নামে একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণ করে। অথচ করোনা সংক্রমণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ২০২১-২০২২ সালে প্রায় আট লাখ হারে দুই বছরে ১৬ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ১০ লাখ হারে ২০ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামে। এতে সারাদেশে এইসব যানবাহনের কারণে সৃষ্ট যানজট ও দুর্ঘটনা দ্বিগুণ হলেও অদৃশ্য কারণে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেনি।

তিনি বলেন, ভারত থেকে একচাটিয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, অটো টেম্পু, হিউম্যান হলার আমদানি অব্যাহত রাখার স্বার্থে তা করা হয়েছে। মাত্র তিন দিনের মধ্যে রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ বা নিয়ন্ত্রণের আদেশ দিয়েছেন আমরা এই আদেশ পূর্ণবিবেচনার মহামান্য হাইকোর্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ সময় যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে আটটি সুপারিশ তুলে ধরে। সুপারিশগুলো হলো-

জরুরি ভিত্তিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় প্রণীত “থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১” এর খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।

বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার বডি মডিফাই করে ব্রেক ও গতির সমতা এনে সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকিমুক্ত নিশ্চিত করে সার্টিফাইসহ নিবন্ধন নিতে হবে। সড়কের সক্ষমতা বিবেচনা করে সিলিং নির্ধারণ করে দেশের সকল সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে, বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণে তাদের আওতাধীন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন প্রদান করতে হবে।

সংগঠনটির সুপারিশগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশার চালককে নূন্যতম এক সপ্তাহের সড়ক আইন-কানুন, ট্রাফিক চিহ্ন, সড়কে মোটর রিকশা চলাচল পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারীদের নামমাত্র ফি নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। হুট করে গ্রাম থেকে এসে প্রশিক্ষণহীন কোনো ব্যক্তি যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে জিপিএস লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। জিপিএস ট্যাকিং এর মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীর প্রধান সড়ক, দেশের হাইওয়ে বা উপজেলা ও পৌরসভার প্রধান সড়কের যেটুকু অংশ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে সেই সড়কে প্রবেশ করা মাত্র জিপিএসের মাধ্যমে ট্রাফিক বিভাগ অটো জরিমানা আদায় করতে পারবে এমন পন্থায় তাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।

ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা জাতীয় মহাসড়কে চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। জরুরীভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করতে হবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/ইআ

নীতিমালা প্রণয়ন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

ঢামেকে অভিযানে ২১ দালাল আটক
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর