স্থগিত করে ফেরত পাঠানো হলো রূপপুরের টেলিযোগাযোগ প্রকল্প
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০৪
ঢাকা: দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ‘রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এক্সটার্নাল টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি প্রায় শূন্য। তথাপি প্রকল্প ব্যয় ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ বাড়িয়ে এটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ প্রেক্ষিতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবটি অনুমোদন না দিয়ে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে টেলিযোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পটি বাতিল করা হয়নি। আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কারণ প্রকল্পটি নেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, যদি কোন দুঘর্টনা ঘটে তখন যাতে পার্শ্ববর্তী জেলা ও ঢাকায় দ্রুত খবর পৌঁছানো যায়, সেজন্য এ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এর উদ্দেশ্য শুনেই আমরা ভয় পেয়েছি। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ রকম বিদ্যুৎ প্রকল্পে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বলা হয়েছে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কেমন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা দরকার -সেটি নিশ্চিত হয়েই্ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, রূপপুর প্রকল্পটি আমরা তো বন্ধ করতে পারবো না। এটি হয়েই গেছে, এখন শেষ করতে হবে। কিন্তু সর্বোচ্চ নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, শুধু ব্যয় বৃদ্ধিই নয়, দুই বছরের বেশি প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছরের বেশি বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, রাশিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের শর্ত প্রতিপালন সম্ভব না হওয়ায় ক্রয় চুক্তি করা যায়নি। ফলে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় যন্ত্রপাতির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আছে নতুন কাজের অন্তর্ভূক্তিও। এসব কারণে মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় শূন্য অগ্রগতি বিরাজ করছে প্রকল্পটিতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৩৪৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৭২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৯১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। তবে গত মার্চ মাস পর্যন্ত এটির আওতায় খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ফলে আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ।
এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ে অগ্রগতি কম হওয়ায় নানা কারণে এখন ২০২৬ সালেরর জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশিষ্টরা জানান, নেটওয়ার্ক ডিজাইন চূড়ান্তকরণ কাজে রাশিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা ছিল। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক ফি পরিশোধে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়। যেগুলো প্রতিপালন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ক্রয় সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও চুক্তি করতে না পারায় দীর্ঘ সময় চলে যায়।
এছাড়া তিনটি এনটিটিএন অপারেটরস থেকে আইআরআউ ভিত্তিতে অপটিক্যাল ভাইবার লিজ নেওয়া বাবদ চাহিদা করা ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপিতে উলেখ করা ব্যয়েরে চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এদিকে যখন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় তখন বৈদেশিক যন্ত্রপাতি খাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ছিল এক ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ৪০ পয়সা। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বেড়ছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। এ কারণে যন্ত্রপাতি খাতে ব্যাপক দাম বেড়েছে।
সূত্র জানায়, মূল ডিপিপিতে না থাকলেও চাহিদা, কারিগরি ও সেবাজনিত কারণে টেলিকম সরঞ্জামাদি ও সিকিউরিটি ইক্যুপমেন্ট এর সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। সিকিউরিটির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সংশোধনী প্রস্তাবে সব লেয়ারে নতুন করে সিকিউরিটি যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রন্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে আরও নতুন নতুন অনেক কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবটি নিয়ে এর আগে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়।
এগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ক্রয় পরিকল্পনায় আর্থিক ক্ষমতা অর্পন বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত ক্রয় অনুমোদনকারীকর্তৃপক্ষের নাম এবং পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী ক্রয় প্যাকেজের সুনিদিষ্ট পরিমাণ ও সুনিদিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি উলেখ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত যে ব্যয় হয়েছে তার উপযুক্ত প্রমানাদি, এমটিবিএফ (মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো) প্রত্যয়ন ও অর্থায়ন পরিকল্পনা আরডিপিপিতে যুক্ত করতে হবে। এছাড়া যেসব খাতে ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
সারাবাংলা/আরএস/ইআ