‘অবাধ্য’ ওয়ার্ড সচিবকে শাসালেন মেয়র— মাস্তান হয়ছো মিয়া?
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আকস্মিকভাবে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম দেখতে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সবাই তটস্থ, ব্যতিক্রম শুধু একজন— ওয়ার্ডের সচিব পারভেজ কবির। মেয়র যখন পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের হাজিরা নিচ্ছিলেন, সেটা দেখেও নিজের মতো করেই নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন সচিব।
সচিবের এমন কর্মকাণ্ড দেখে বেজায় ক্ষ্যাপেন মেয়র। তাকে ডেকে সামনে এনে মেয়র বলেন, ‘তুমি ওখানে গেছ কেন? এদিকে আসো তুমি। মাস্তান হয়ছো মিয়া? থাপড়াই দাঁত ফেলে দেব একদম। বেয়াদপ তুমি। আমাকে চেন তুমি ? ফাঁকিবাজ তুমি।’
মেয়রের এমন শাসানিতে হতভম্ব হয়ে কাচুমাচু করতে থাকেন সচিব পারভেজ কবির। এরপর মেয়র চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীকে ওয়ার্ড সচিবকে অন্য ওয়ার্ডে বদলি করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ওকে চেঞ্জ করে দেন, অন্য ওয়ার্ডে দেন। গাদ্দারি, এখন পর্যন্ত সে বেয়াদবি করছে। থাপড়াই দাঁত ফেলে দেব ওর।’
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে নগরীর হেমসেন লেনের মুখে জামালখান ওয়ার্ড কার্যালয় প্রাঙ্গনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের হাজিরা নেওয়ার সময় মিজানুর রহমান নামে একজনকে অনুপস্থিত পান মেয়র। এসময় তিনি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা সুপারভাইজার আখতার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘চাকরি চলে যাবে আমি বলে দিলাম। আমি তোমাদের সুযোগ দিচ্ছি। দুদিনের মধ্যে ময়লা ক্লিন করতে হবে। এখানে কে স্থায়ী আর কে অস্থায়ী— আমি দেখব না। চাকরি চলে যাবে। কাজ না করলে চলে যাবে। আমার কাজ দরকার, শহর পরিষ্কার দরকার। কোনো ধরণের অভিযোগ যাতে আমি না শুনি।’
এরপর মেয়র ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোনো ধরনের ফাঁকিবাজি আপনারা করবেন না। এটাকে আপনারা যেহেতু রোজগারের উপায় হিসেবে নিয়েছেন, সেহেতু হালাল হিসেবে নেবেন। জনগণের সহায়ক শক্তি হিসেবে আপনারা কাজ করবেন। কেউ ফাঁকিবাজি করলে তার চাকরি না-ও থাকতে পারে।’
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জামালখানকে হেলদি ওয়ার্ড বলা হয়, এ হেলদি ওয়ার্ডের নাম যাতে তারা রাখে। আমি আজ এখানে এসে কর্মীদের রাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলেছি। দিনে বিকেল চারটা থেকে তারা মশার ওষুধ মারবে। আগামী দুমাস ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাব কমলেও কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। কিউলেক্স মশার স্প্রে যাতে নিয়মিত হয় এবং নগরবাসী যাতে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পায় সবাইকে বিকেল চারটা থেকে মশার স্প্রে করতে হবে। যদি মশার স্প্রে করা না হয় চাকরি অনেকের নাও থাকতে পারে। কাজেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি এ দুমাস তোমরা মশার স্প্রে করবে।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামকে একটু সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছি। এজন্য হয়তো আপনারা আমাকে রাস্তায় দেখছেন। আগে যারা ছিল তারা হয়তো রাস্তায় আসতো না। আমি বাধ্য হয়েছি রাস্তায় আসতে। কারণ আমি জনগণের খেদমত করার জন্য এখানে এসেছি। আমি নগর পিতা নয়, নগর সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। ৪১টি ওয়ার্ডে আপনারা যদি কোনো জনদুর্ভোগ দেখেন সেটা রাস্তা, মশা, ডাস্টবিন, ময়লা কিংবা অন্য কিছু হোক আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদেরই মানুষ।’
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের হাজিরা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘হাজিরা আমি এজন্য দেখছি যে তারা ঠিকমতো আসে কি না। যদি এখানে কেউ না আসে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমি আসার পরও যদি তারা না আসে তাহলে বুঝতে হবে তারা ফাঁকিবাজি করছে। এখানের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে। জনগণ যদি বলে সে করছে তাহলে করছে। আর যদি বলে সে কাজ করছে না, তাহলে ফাঁকিবাজি করছে।’
তিনি বলেন, ‘৮ থেকে ১০টি ওয়ার্ডে আমি গিয়েছি। ৪১টি ওয়ার্ডেই আমি যাব। আমি রাতেও বের হচ্ছি। কাজে ঠিকভাবে কাজ হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য। আমার ডাম্পিং স্টেশনে ঠিকভাবে কাজ হচ্ছে কি না। সেটাও আমি দেখছি। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় আমি যেতে পারি। কাজে সবাই সাবধান হয়ে যান। দেখে দেখে কোনো বাসায় ফগার মেশিন দেওয়া যাবে না। প্রত্যেক জনগণের বাসায় স্প্রে করতে হবে। কোনো ধরনের বৈষম্য আমি চাই না। আমি ৭০ লাখ মানুষের মেয়র। কোনো ধরনের বৈষম্য আমি মেনে নেব না।’
কাউন্সিলর অফিসে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘এখানে ওয়ার্ড সচিবকে আমি ডেকেছি। কিছুটা বকাও দিয়েছি। যাতে করে জনগণ ঠিকমতো সেবা পায়। জন্মসনদ ও অন্যন্য কাগজপত্র নিতে যাতে অতিরিক্ত টাকা না নেওয়া হয় সেটা আমি হুঁশিয়ার করে দিয়েছি সবাইকে। জন্মসনদ করতে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫০ টাকার অধিক কেউ দেবেন না। অনেকের কাছ থেকে নাকি ১০০ ও ২০০ টাকা নিচ্ছে। এরকম কেউ নিলে আপনারা আমাকে জানাবেন।’
‘সাংবাদিক ভাইদের বলবো আপনারাও এসব মনিটরিং করবেন। যদি কোনো ধরনের গাফিলতি তারা করে বা কাজ পালন করতে ব্যর্থ হয় আপনারা আমাকে জানাবেন।’- বলেন মেয়র।
এসময় চসিক মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এইচআই