হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা আমাদের আমানত: টুকু
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৩
সিরাজগঞ্জ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা আমাদের আমানত। কেউ তাদের নির্যাতন করবেন না। আওয়ামী লীগ চাইছে একটা ঝামেলা করতে। হিন্দুদের নাম করে ছাত্রলীগ হামলা করছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে নিমগাছি কলেজ মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও সলঙ্গা থানা বিএনপি আয়োজিত ঐতিহাসিক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আজ আমার এখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল না। আজ থেকে দুই বছর আগে যখন আমি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করছি, তখন শুনলাম খুনি হাসিনার আদালত আমাকে নয় বছরের সাজা দিয়েছে। আমি তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তার রায় আমি মানি না, হাসিনার জেলে আমি যাব না। জেলে যাওয়ার চেয়ে আমি বিদেশে থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখব, আন্দোলন পরিচালনা করব; আমি তাই করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আজ হাসিনা আবারও বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে। তাহলে কী করতে হবে; আমাদের সজাগ থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয় নাই। আমরা কিন্তু ক্ষমতায় আসি নাই, ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাই বিএনপির ক্ষমতায় আসার একমাত্র পথ হলো জনগণের ভোট।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশের মানুষ হাসিনার কয়েদি হয়ে গিয়েছিল। ১৬ বছর লড়াই করার পরে আজ আমরা একটা মুক্ত আকাশ দেখতে পাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে চাই, আওয়ামী লীগ যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তারা দেশের ক্ষতি করতে পারবে না।’
টুকু বলেন, ‘আজ হাসিনার পতন হয়েছে, সে তার বাড়া ভাতও খেতে পারে নাই। যে মুরগির রান খেতে চেয়েছিল, জনগণ সেই মুরগির রান খেয়েছে। হাসিনার অহংকার এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল যে, তিনি ভাবতেন আল্লাহর পরেই সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা খালেদা জিয়াকে টুপ করে নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিল। আজ আপনি কোথায়। যাদের দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন আজ তাদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ যদি সাঈদ-মুগ্ধসহ অন্যান্য শহিদের রক্তে রাজপথ লাল না হতো, পিচ্ছিল না হতো তাহলে এইদিন দেখতে হতো না। ১২ বছর পরে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে সেনাবাহিনী তাকে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মান দিয়েছে স্যালুটের মাধ্যমে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কাছে ওয়াদা করেছে, আমরা জনগণকে নিয়ে ক্ষমতায় আসব। তারা বলেছে, এই দেশকে সংস্কার করতে হবে। আওয়ামী লীগ লুটপাট করে দেশটা শেষ করে দিয়েছে। তাই সংস্কার খুব দরকার। এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আর সেই ৩১ দফার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের তারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘একসময় জিয়াউর রহমান যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই তারেক রহমানও দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। একসময় তিনিই হবেন বাংলাদেশের পথ প্রদর্শক।’
রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দুলাল হোসেন খান, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান টুটুল ও সলঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আলীম সরকারের পরিচালনায় ও রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শামছুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক ও সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান হাসান, সলঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান সরকার, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি স ম আফসার আলী, রায়গঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি হাতেম আলী সুজন, তাড়াশ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তপন কুমার গোস্বামী প্রমুখ।
জনসভায় জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/পিটিএম