মিয়ানমারের সামরিক নেতার বিরুদ্ধে আইসিসিতে পরোয়ানার আবেদন
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৫৮
মিয়ানমারের সামরিক নেতা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন এর প্রসিকিউটর করিম এ এ খান। তিনি জানিয়েছেন, আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার আই-তে তিনি এই আবেদন করেছেন।
ঢাকায় সফররত আইসিসির প্রসিকিউটর অফিসের ইউনিফায়েড টিম প্রধান এসা এমবাই ফাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বিভাগের কমান্ডার-ইন-চিফ ও দেশটির ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
করিম বলছেন, একটি বিস্তৃত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পর তার কার্যালয় এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মিন অংকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়বদ্ধ করার ‘যুক্তিসঙ্গত কারণ’ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নির্বাসন ও নিপীড়নসহ এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ মিয়ানমারে ও আংশিকভাবে বাংলাদেশেও সংঘটিত হয়েছে।
আইসিসি প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে মিয়ানমার সরকারের উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দায়েরের উদ্যোগ এই প্রথম।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ এই সহিংসতাকে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের প্রয়াস হিসেবে অভিহিত করেছিল। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে আইসিসি ওই সময়কার সহিংসতা-নির্যাতনের অভিযোগগুলো তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ সফররত করিম এ এ খান এক বিবৃতিতে বলেন, আমার কার্যালয় জানতে পেরেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে। মিয়ানমারের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনী-তাতমাডু, সীমান্তরক্ষী পুলিশ এবং অ-রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকের সমর্থনে এসব অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছিল।
আইসিসি এই প্রসিকিউটর বলেন, আমার কার্যালয়ের আবেদনের পক্ষে সাক্ষীর সাক্ষ্য, কিছু অভ্যন্তরীণ সাক্ষী থেকে ডকুমেন্টারি রেকর্ড এবং প্রামাণ্য অডিও-ভিজ্যুয়াল নানা উপাদান রয়েছে।
প্রমাণ সংগ্রহে বিভিন্ন দেশ, সুশীল সমাজ, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ অংশীজনদের সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন করিম। বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ব্যবস্থার অবিচল সমর্থন আমাদের তদন্তকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সহনশীলতা ও সহযোগিতার প্রশংসা করে খান তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মিয়ানমারে সহিংসতায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এই ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের গল্প শেয়ার করেছেন ও তথ্য দিয়েছেন, তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
এর আগে মঙ্গলবারসহ গত তিন বছরে একাধিকবার কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন খান। প্রতিবারই তিনি রোহিঙ্গা নারী, যুব কর্মী ও প্রবীণদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রতিবারই তারা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছেন। খান বলেন, ‘তাদের স্পষ্টতা, উদ্দেশ্য ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তাদের কণ্ঠস্বর আমাদের প্রচেষ্টাকে চালিত করে।’
মিন অং হ্লাইংয়ের গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন এখন আইসিসি বিচারকদের হাতে। বিচারকরা এখন আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে দেখবেন পরোয়ানা জারির জন্য পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ সেখানে রয়েছে কি না।
করিম বলেন, বিচারকরা আবেদন গ্রহণ করে পরোয়ানা জারি করলে আমরা মিন অংকে গ্রেফতারের সুবিধার্থে আদালতের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। তদন্ত ত্বরান্বিত করা ও প্রয়োজনে বাড়তি আবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
করিম খান বলেন, আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলককে পুনর্নিশ্চিত করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে যে রোহিঙ্গাদের ভুলে যাওয়া হয়নি। সব মানুষের মতো তারাও আইনের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।
গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে এসেছেন করিম খান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর
আইসিসি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত(আইসিসি) করিম এ এ খান গ্রেফতারি পরোয়ানা জেনারেল মিন অং হ্লাইং মিন অং হ্লাইং মিয়ানমার