ইসকন নিষিদ্ধের দাবি সমমনা ইসলামী দলসমূহের
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১৭
ঢাকা: ইসকনকে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন উল্লেখ করে বাংলাদেশে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সমমনা ইসলামী দলসমূহ। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির (বার) আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি বা দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা চালনাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে পাঁচ ইসলামী দলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামীকাল (২৯ নভেম্বর) শুক্রবার মসজিদগুলোতে সম্মানিত ইমাম খতিবদের বয়ানে উগ্রবাদী ইসকন সম্পর্কে সচেতনতামূলক বক্তব্য ও জনগনকে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে, ছাত্র জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে বহুবিধ ষড়যন্ত্র চলছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ছড়িয়ে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসকন ‘আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ’ নামে পরিচিত। তাদের তথ্যমতে এটি একটি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সংগঠন, যা বৈষ্ণব ধর্মের উপর ভিত্তি করে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি প্রচার করে। এটি ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্কে অভয়চরণারবিন্দ স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যিনি লেখাপড়া করেছেন খ্রিস্টানদের চার্চে। পেশায় ছিলন ফার্মাসিউটিকাল ব্যবসায়ী, কিন্তু হঠাৎ করেই তার মাথায় কেন হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্করণের কথা আসলো কিংবা কোন শিক্ষাবলে চাপলো তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। স্বামী প্রভুপাদ নতুন ধরনের হিন্দু সংগঠন চালু করতেই প্রথমেই তাতে বাধা দিয়েছিলো মূল ধারার সনাতন হিন্দুরা। অধিকাংশ হিন্দুই তার বিরুদ্ধচারণ শুরু করে। কিন্তু সেই সময় স্বামী প্রভুপাদের পাশে এসে দাড়ায় জে. স্টিলসন জুডা, হারভে কক্স, ল্যারি শিন ও টমাস হপকিন্স-এর মত চিহ্নিত ইহুদী- খ্রিস্টান এজেন্টরা।
বর্তমানে এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়। কাজে কর্মে আমরা দেখছি ইসকন একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন। এ সংগঠনটির বেসিক কনসেপ্ট মধ্যযুগের চৈতন্য’র থেকে আগত। চৈতন্য’র অনতম মতবাদ হচ্ছে- ‘নির্যবন করো আজি সকল ভুবন’। যার অর্থ- সারা পৃথিবীকে যবন মানে মুসলমান মুক্ত করো।
আবু রুশদের লেখা ‘বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা’- বইয়ে লেখা আছে-‘ইসকন নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। মূলতঃ এটা ইহুদীদের একটি সংগঠন বলে জানা গেছে। এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।’ (বই- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে- ‘র’ পৃষ্ঠা:১৭১)
ইসকনের কাজের কিছু নমুনা:
বাংলাদেশে সনাতন মন্দিরগুলো দখল করা এবং সনাতনদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার কাজের নজির ইসকনদের রয়েছে। যেমন- স্বামীবাগের মন্দিরটি আগে সনাতনদের ছিল, পরে ইসকনরা কেড়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া পঞ্চগড়েও সনাতনদের পিটিয়ে এলাকাছাড়া করে ইসকনরা। ঠাকুরগাও-এ সনাতন হিন্দুকে হত্যা করে মন্দির দখল করে ইসকন। এ ছাড়া অতিসম্প্রতি সিলেটের জগন্নাথপুরে সনাতনদের রথযাত্রায় হামলা চালিয়েছে ইসকন নেতা মিন্টু ধর। চট্টগ্রামে হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ ইসকনকে ধর্ম বিরোধী পেশী শক্তি, উগ্রবাদী এবং সাধুবেশী সন্ত্রাসী বলেছিল।
২০১৪ সালে ঢাকাস্থ স্বামীবাগে মসজিদের তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসকন। ২০১৬ সালে সিলেটে মসজিদের ইমাম খুন করে, ইসকন মন্দির হতে পাশ্ববর্তী মসজিদে গুলি করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন তৈরি করে, উগ্রহিন্দুত্ববাদের বিস্তৃতি ঘটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যেমন- জাতীয় হিন্দু মহাজোট, জাগো হিন্দু, বেদান্ত, ইত্যাদি। বর্তমান অনলাইন জগতে যে ধর্ম অবমাননা তার ৯০% করে ইসকন সদস্যরা। এনজিও হয়েও তারা রাজনীতি নিয়ে নাক গলায়। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চিন্ময় কৃষ্ণের বক্তব্য অনলাইনে পাওয়া যায়। তাদের হিংস্রতার নমুনা দেখা গেল এডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায়। অথচ সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসকন এক বিবৃতিতে বলেছে এটি একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন। অন্যদিকে তারা ভারতকে আহ্বান করেছে হস্তক্ষেপ করতে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলি বিশেষ করে বিজেপি বেশ আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের বিবৃতিকে আমরা স্বাগত জানাই।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। দেশে-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইসকনের বিরুদ্ধে বলা মানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বলা নয়। হিন্দু ভাই বোনদের সতর্ক হতে হবে যাতে ইসকনের পাতা ফাঁদে কেউ পা না দেয়।
এ সময় নেজামে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবুদল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনজে