ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা: পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪০
ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ (আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা) বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) এক গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ইরান তাদের সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত ৬,০০০ সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করার এবং আগে থেকেই স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজগুলোর কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আবেদনে আইএইএর ৩৫-দেশের বোর্ড ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই পদক্ষেপ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যদিও ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না।
ইরান বর্তমানে ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০% মাত্রার খুব কাছাকাছি। অন্য কোনো দেশ এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেনি যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়।
নতুন পরিকল্পনার বিবরণ
গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইরান নতুন সেন্ট্রিফিউজগুলোতে প্রাথমিকভাবে ৫% মাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছে। বিশেষ করে ফোর্দো স্থাপনায় এই নিম্নমাত্রার সমৃদ্ধকরণকে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হতে পারে। তবে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা পরবর্তীতে সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব।
ইরান ইতিমধ্যে ১০ হাজারের বেশি সেন্ট্রিফিউজ পরিচালনা করছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, নাতাঞ্জ এবং ফোর্দো স্থাপনাগুলোতে আরও ৩২টি ক্যাসকেড স্থাপন করা হবে, প্রতিটিতে ১৬০টির বেশি মেশিন থাকবে। এর মধ্যে একটি ক্যাসকেডে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৫২টি উন্নত আইআর-৬ মডেলের সেন্ট্রিফিউজ থাকতে পারে, যা ইরানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ফোর্দো পারমানবিক কেন্দ্রটি পাহাড়ের ভেতরে নির্মিত হওয়ার কারণে এর ওপর নজরদারি রাখা সহজ। এখানে ইরান বর্তমানে ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। আইএইএ জানিয়েছে, ইরান নতুন সেন্ট্রিফিউজগুলো চালু করার পর পরিদর্শনের ঘনত্ব বাড়াতে হবে।
নাতাঞ্জ পারমানবিক কেন্দ্রে ইরান ১৮টি নতুন ক্যাসকেড স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে, প্রতিটিতে ১৬৬টি আইআর-৪ সেন্ট্রিফিউজ থাকবে। এছাড়া, এখানে ১ হাজার ১৫২টি আইআর-৬ সেন্ট্রিফিউজ নিয়ে একটি বড় ক্যাসকেড স্থাপন করা হবে।
কূটনৈতিক অচলাবস্থা
আইএইএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান সম্প্রতি ৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের পরিমাণ সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এটি আইএইএর বোর্ডের প্রস্তাব না পাস করার শর্তে ছিল। বোর্ড প্রস্তাব পাস করায় ইরান তার পদক্ষেপ আরও বাড়িয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, ইরানের এই উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কোনো বেসামরিক ভিত্তি নেই। এ অবস্থায়, ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে। পাশাপাশি, আইএইএ তাদের নজরদারি কার্যক্রম কতটা কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারবে, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সারাবাংলা/এনজে