ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে হেফাজতের লংমার্চের ডাক
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ভারতীয় দূতাবাস কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। আগামী সোমবার এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর দুই নম্বর গেইটে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহার। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনিদের ফাঁসি ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে হেফাজত ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর।
এদিন দুপুরে জুমার নামাজ শেষে নগরীর ওয়াসার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনটি। মিছিলে ‘ইসকনের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান, দিল্লি না ঢাকা/ঢাকা ঢাকা, সাইফুল ভাইয়ের রক্ত/বৃথা যেতে দেবো না, ইসকন জঙ্গী/ ফ্যাসিবাদের সঙ্গী’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। মিছিলটি নগরীর ওয়াসা, জিইসি হয়ে দুই নম্বর গেইট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘আগামী সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনার (সহকারী) অফিস অভিমুখে আমাদের লংমার্চ হবে। আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। আমরা কোনো পাটকেল নিক্ষেপ করবো না।’
‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ছাত্র সমন্বয়ক ও সরকারকে জানিয়ে দেব যে, আমরা ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করব। শান্তিপূর্ণ দূরত্বে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এদেশের বেশিরভাগ হিন্দু সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা ইসকনসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই, আগামীতে আলাদাভাবে আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি নই। হাসিনা সরকারের পতনের পর আমাদের দেশের অনেকেই হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। অতি উদারতা দেখাতে পূজামণ্ডপেও গিয়েছিল অনেকে, যেটা আমরা সমর্থন করি না। এত উদারতা দেখানোর পরও তারা আমাদের ভাইকে জবাই করে খুন করল।’
হিন্দু সংগঠনের নেতাদের তিনটি শর্ত পূরণের আহবান জানিয়ে মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘এখন যদি কোনো হিন্দু সংগঠন আমাদের সঙ্গে বসতে চায় তাহলে প্রথম শর্ত হলো তাদের ভারতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার যেসব ভূয়া প্রোপাগান্ডা হয়েছে, সেসবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে। তাদের বলতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ আছে।’
‘প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যে খবর প্রচার করেছে, সে কথা মিথ্যা ও ভূয়া, এটা হিন্দু নেতাদের বলতে হবে। আমার তিন নম্বর শর্ত হলো আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মারা বিভিন্ন জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও গুণ্ডা রয়েছে। সকলকে বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া ছাড়া আমরা আপনাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসবো না। কোনো ইসলামিক দল যদি ডায়ালগে বসেন তারা মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ইসকন নয়, সনাতনী আরও সংগঠন রয়েছে। সনাতনী জাগরণ পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এরাও সমানভাবে সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গী সংগঠন। আমাদের মূল লড়াই কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের সঙ্গে নয়। এমনকি আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশের ইসকন, সনাতনী মহাজোটসহ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গেও নয়। আমাদের লড়াই দিল্লির সঙ্গে। দিল্লি বাংলাদেশে কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে। কুকুরের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া নেই। যারা ওই কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে বোঝাপড়া সে দিল্লির সঙ্গে হবে। আমরা আমাদের লড়াইকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।’
মুফতি হারুন বলেন, ‘হিন্দুস্তান আমাদের জাতীয় নেতাদের তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়েছে। হিন্দুস্তান প্রথম আলো, ডেইলি স্টারকে আমাদের দেশে চাপিয়ে দিয়েছে। হিন্দুস্তান আমাদের দেশে এমন আগ্রাসন নেই- সাংস্কৃতিক, সামরিক, রাজনৈতিক তারা চালায়নি। হিন্দুস্তানের সামনে দুটি পথ আছে। হিন্দুস্তানকে তার অতীতের অবস্থান পরিবর্তন করে আমাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসতে হবে এবং আগামীদিনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। হিন্দুস্তান যদি তার ষড়যন্ত্র অব্যহত রাখে, বিভিন্ন সংগঠন ও কুকুরকে লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি করতে চায়, তাহলে আমরাও হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক আগ্রাসন অব্যহত রাখব।’
‘বাংলাদেশে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার মাথা চিহ্নিত করতে হবে আপনাদের। ইতোমধ্যে হিন্দুস্তানের সঙ্গে ইসরায়েল যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরাইল ও ভারত যৌথ চক্রান্ত করে যাচ্ছে। আমাদের লড়াই সূদুরপ্রসারী। বাংলাদেশের কোনো হিন্দুর গায়ে আমাদের টোকাও পড়বে না,’ – বলেন হারুন ইজাহার।
সারাবাংলা/আইসি/এসআর