‘সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে আছে, ওখান থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০৮ | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৪
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সীমান্তের ওপারে ফ্যাসিস্ট বসে আছে, ওখান থেকে নতুন নতুন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তারা একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানে ফলাও করে বিশ্বকে দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশ নাকি মৌলবাদীর দেশ হয়ে গেছে; বাংলাদেশে না কি সংখ্যালঘু ভাইকে নির্যাতন করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেইটের খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত ছাত্র কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের পত্র-পত্রিকাগুলোতে, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে লেখা হচ্ছে যেন, বাংলাদেশে এখন এই ধরনের নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। আসলে তা না। কারা এগুলো করছে? কেন করছে? আমি এই কথাটা এজন্য বলছি যে, এই আনন্দে আমাদের থাকার অবকাশ নাই যে, আমরা জিতে গেছি, সব হয়ে গেছে। আমাদের মাথার ওপরে সেই খড়গ এখনো আছে এবং চতুর্দিক থেকে তারা চেষ্টা করছে ফের অন্ধাকারে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য খুব সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।’
ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতি একটাই অনুরোধ যে, আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। কোনো রকম হঠকারিতা, কোনোরকম বিশৃঙ্খলা যাতে কেউ করতে না পারে সেটাকে রুখে দিতে হবে, এটা হচ্ছে একটা বড় কাজ।’
তিনি বলেন, ‘শেষ করে দিয়ে গেছে ওরা (আওয়ামী লীগ)। কোথাও কোনো অবশিষ্ট রাখেনি। একেবারে লুটপাট করে ফোকলা করে দিয়ে গেছে। অর্থনীতি নাই, ব্যাংক লুট, সব জায়গায় লুট, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজটাকেই শেষ করে দিয়ে গেছে। আমার অনুরোধ তোমরা ছাত্র, তোমরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছ, তোমরা অংশীদার, তোমরা এই বিষয়গুলোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে। কেউ যেন আমাদের অর্জিত সম্পদ কেড়ে নিতে না পারে, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
‘আমি তোমাদের ভারাক্রান্ত করতে চাই না। কারণ, নিঃসন্দেহে তোমরা নতুন স্বপ্ন দেখছ, নতুন পৃথিবীর দেখছ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা তোমরা চিন্তা করছ, এর পরে কী? হ্যাঁ এটাই তোমাদের চিন্তা করতে হবে। এখন এই বাংলাদেশকে তৈরি করো, এখন এই বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলো’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমার নাতনিও বলে, হাসিনা পলাইছে। হ্যাঁ জিজ্ঞাসা করলে বলে, হাসিনা পলাইছে। হাসিনা পালিয়েছে না, হাসিনা পলাইছে। এই পলাইছে কথা চালু করতে হবে জোর করে। এটা এ জন্য বলা দরকার, এই ধরনের ফ্যাসিস্ট, এই ধরনের নির্যাতনকারী, এই ধরনের নিপীড়নকারী, এই ধরনের খুনি, এই ধরনের হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। সেই জায়গাটা আমরা পার হয়েছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চারদিকে ফের অন্ধকার আসছে। এটা তোমরা ভালো করে জানো। আমি ভীষণ কষ্ট পাই যখন দেখি যে, আমার ছেলেরা মারামারি করছে। যখন তুমি এত বড় একটা বিজয় অর্জন করলে, একটা ফ্যাসিস্টকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলে, একটা ইতিহাস সৃষ্টি করলে, সেই সংঘাত আমাদের দেখতে হবে যে, সোহরাওয়ার্দি কলেজ ও মোল্লা কলেজের ছাত্ররা মারামারি করে রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা তো কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন , ‘‘এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এদেরকে বুঝানো ‘দিস ইজ নট দ্য ওয়ে…এটা রাস্তা নয়।’ আমি আবারও খুব ভীত হই, যখন দেখি ইসকনের নামে, ধর্মের নামে একজন আইনজীবী নিহত হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাইনি। আমরা তো একটা নতুন জায়গায় এসছি, নতুন স্বপ্ন দেখছি, নতুন দিগন্ত দেখছি। সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। আমি খুব খুশি হতাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা লাখ লাখ ছাত্রদের মিছিল নিয়ে বেরিয়ে এসছে যে, আমরা শান্তি চাই, আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না। এরই মধ্যে অনেকে প্রতিবাদ করেছে। আমি বয়স্ক মানুষ, জীবনের প্রায় শেষ সময় এসে গেছি। একটাই অনুরোধ, আমরা যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন আমাদের বৃথা না যায়।’
সংগঠনের সমন্বয়ক মিলন মাহমুদের সভাপতিত্বে কনভেনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শরিফ উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসেন শাহরিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমির হোসেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরফান আলী, অধ্যাপক এসএম মাহবুবুর রহমান, তেজগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক সোলায়মান আলী, বিএনপির পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেড মূতর্জা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল, যুব দলের কামাল আনোয়ার আহম্মেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, মহানগর বিএনপির পাপ্পু সরকারসহ ঠাকুরগাঁওয়ের ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম