Thursday 26 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ ডিসেম্বর ১৯৭১— পিছু হটতে শুরু করে হানাদার বাহিনী

আসাদ জামান
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১১ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪০

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর। সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। বীর বাঙালির তীব্র প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখে রণেভঙ্গ দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাতে শুরু করে ইয়াহিয়া খানের দখলদার বাহিনী। এ দিন সিলেটের কানাইঘাটে লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩০ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও রাজাকার নিহত হয়। জুড়ি, বড়লেখা এলাকা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী কামান সরিয়ে ফেলে। আর মুক্তিবাহিনীর হাতে পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়ে কুলাউড়া পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

এ দিন মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়ার দর্শনা ও সিলেটের শমসের নগর আক্রমণ করে। কুষ্টিয়ার কাছে মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনের মধ্যে মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাকিস্তানের সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করে। এতে বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।

সিলেটের ছাতক শহরে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকার নিহত হন। আর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজারকে মুক্ত করে সামনে এগিয়ে যান। কুমিল্লার কসবা রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৬০ জনের বেশি পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটের শমসের নগর ও কুষ্টিয়ার দর্শনা দখল লড়াইয়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে। এ দিন রাতে কর্নেল শফিউল্লাহ, দ্বিতীয় বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর মঈন, ১১ বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার মেজর নাসিমের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেরানী, সিঙ্গারাইল, গৈরালসানী, রাজাপুর ও আজমপুর এলাকা শত্রুমুক্ত করে। যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন খাঁ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শহিদ হন। আর ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সাতক্ষীরা মহকুমার কালিগঞ্জ পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হওয়ায় বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ফণি মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, অর্থসচিব এ জামান ও আইজি এম এ খালেক কালিগঞ্জে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে আক্রমণাত্মক ও পূর্ব ফ্রন্টে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনীমুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্যসভায় বক্তৃতায় বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তনি সৈন্য অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার জন্য পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়— সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী ও যশোর জেলার ৬২টি থানা এবং নোয়াখালী জেলার সব চর এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিশিষ্ট রাজনীতিক জাসদ নেতা আব্দুল মালেক রতন একাত্তরের ডিসেম্বরের প্রথম দিনটিতে ছিলেন কুমিল্লার দেবীদ্বারে। সে দিনের স্মৃতিচারণ করে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পহেলা ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বিমান দিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করে। ওই সময় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল আর মেশিনগান দিয়ে বিমান বিধ্বস্ত করার জন্য গুলি ছুঁড়তে থাকি। আমরা জানতাম, এই অস্ত্র দিয়ে বিমান বিধ্বস্ত করা সম্ভব না। তারপরও পাকিস্তানি বিমানের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকি। পরে ভারতীয় বাহিনী তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে উচ্চমাত্রার গেলাবর্ষণ করলে পাকিস্তানিতের চারটি বিমান বিধ্বস্ত হয়।’

তথ্যসূত্র:

১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (১-১৫ খণ্ড); সম্পাদনা: হাসান হাফিজুর রহমান

২. বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি; সংকলসন: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

একাত্তর বিজয়ের দিন মহান মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর