অবশেষে সেন্টমার্টিনের পথে পর্যটকবাহী জাহাজ
১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:০১ | আপডেট: ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:২৯
কক্সবাজার: নানা জটিলতা কাটিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে পর্যটক নিয়ে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পথে রওয়ানা করেছে এমভি বারো আউলিয়া। ৮৫০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও এই ট্রিপে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন ৬৫৩ জন।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে জাহাজটি ছেড়ে যায়। বিকেল নাগাদ এর সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌ রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। ওই দিন পর্যটক নিয়ে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজের সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিল। তবে পর্যটক সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করে জাহাক কর্তৃপক্ষ। এই রুটে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসও চলাচলের অনুমতি পেয়ছে, তবে তারাও এখন পর্যন্ত যাত্রা শুরু করেনি।
এমভি বারো আউলিয়ার পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার পরিকল্পনা থাকলেও ছেড়েছে কেবল এমভি বারো আউলিয়া। এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন। তবে ৬৫৩ জনকে নিয়ে ছেড়ে গেছে জাহাজটি।
সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মেনে পর্যটকেরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সপরিবারে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন ওবাইদুর রহমান। তিনি বলেন, দ্বীপে দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে যাচ্ছি।
ওবাইদুরের মতো আরও কয়েকজন যাত্রীও দুয়েক দিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন বলে জানালেন নুনিয়ারছড়া জাহাজ ঘাটে।
এদিকে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় দ্বীপটিতে পলিথিন ও সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক তথা একবার ব্যবহারের উপযোগী প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছ। সেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে জেটিতে জাহাজে ওঠার সিঁড়িতে পর্যটকদের হাতে পলিথিন ও সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক আছে কি না, তা তদারকি করতে দেখা যায় পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটকদের পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাহাজে যেন কেউ কোনোভাবেই পলিথিন ও সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদফতর।
সকালে ছেড়ে যাওয়ার আগে এমভি বারো আউলিয়া পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কার্যকর করতে এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি কাজ করবে।’
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমানের সই করা এক আদেশে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়। আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে করা হয়েছে সদস্যসচিব।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রূটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ