‘খেলাপি ঋণ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত’
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯
ঢাকা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু বা ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ করা যেত বলে জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এছাড়া, গত ১৫ বছরে অর্থনীতির সব খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। যেখানে মন্দ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল সীমাহীন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত সরকারের ১৫ বছরের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে শ্বেতপত্র কমিটির সংবাদ সম্মেলনে কমিটিপ্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। অবকাঠামো খাতে মোট ব্যয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চুরি হয়েছে। প্রযুক্তি খাতেও অনেক চুরি হয়েছে, তবে ধরা কঠিন। এসব বাজার সম্পর্কে মানুষ জানে না।’
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট। রাজনৈতিক এই প্রভাবের কারণে ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। ক্রমাগত ঋণখেলাপি ও হাই প্রোফাইল কেলেঙ্কারি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং মূলধনকে উৎপাদনশীল খাত থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। নামে-বেনামে ঋণ বের করা, বিদেশে অর্থপাচারসহ কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়, এখন যার চড়া মূল্য দিচ্ছে ব্যাংকসহ পুরো দেশ।
শ্বেতপত্র কমিটির তথ্য বলছে, প্রবাসে কর্মী পাঠাতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গত ১০ বছরে ভিসার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই টাকা ঢাকা এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) নির্মাণ ব্যয়ের চার গুণ। সিন্ডিকেট এবং এই শোষণমূলক নিয়োগের কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে।
কমিটির সদস্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, ‘জ্বালানি খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার খরচের তথ্য দেখেছি। সেখানে তিন বিলিয়ন ডলার হাত বদল হয়েছে। হাত বদলের প্রমাণ নেই, তবে প্রতি প্রকল্পে হাত বদল হয়েছে। ঠিকাদারি কাজে প্রতিযোগিতা হয়নি। যারা কাজ পেয়েছে তাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতি উচ্চ টার্গেট সেট করে লুটপাট করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম