বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ফোন কিনতে ৩ বিধি ভাঙলেন ঢাবি প্রক্টর
২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:২৯ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৬
মোবাইল কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ম না মেনে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়াসহ পদে পদে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই ফোন কেনা ও টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে একই সঙ্গে সরকারি টেলিফোন নীতিমালা ২০১৮, সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রক্টর অফিস ও প্রক্টর কোনোভাবে অবগত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দিয়েছে।’
জানা যায়, নিয়ম না মেনে ফোন কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৪ হাজার ৬০৮ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয় প্রক্টরকে। এ টাকা নিয়ে তিনি একটি স্যামসাং এম-৩৩ মডেলের স্মার্টফোন ও একটি ট্যাব কিনেছেন। অনলাইনে সার্চ করে দেখা যায়, স্মার্টফোনটির দাম ৩০ হাজার টাকা। ট্যাবটির দাম জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংবিধি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে অপ্রত্যাশিত জরুরি সেবার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ক্রয় বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া যায়। এর বেশি হলে দরপত্রের মাধ্যমে পণ্য কিনতে হয়। ফলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন অগ্রিম টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি ভঙ্গ করেছেন।
আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ঢাবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে। জাতীয় টেলিফোন নীতিমালা ২০১৮-এর ৩১/ছ ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রী থেকে সচিব সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা সরকারি টাকায় মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ সচিব পদমর্যাদার হিসেবে মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা পান। তারা গ্রেড-১ সুবিধা পান।
কিন্তু প্রক্টরকে নিয়োগ দেন উপাচার্য। ফলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্য, উপউপাচার্য কিংবা কোষাধ্যক্ষের সমপরিমাণ টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে প্রক্টর কী সুবিধা পাবেন— এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতিমালা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রক্টরের পদমর্যাদা ডিন ও প্রাধ্যক্ষের পরে। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে সাইফুদ্দীন আহমেদ গ্রেড-৪ সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে প্রক্টর হিসেবে পদমর্যাদা বা সুবিধা কী কী দেওয়া হবে, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নিয়ম-নীতি নেই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে কোনো প্রক্টরকে প্রতিমাসে মোবাইল খরচের জন্য পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দের বাইরে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়নি। আবার উপাচার্য, উপউপাচর্য বা কোষাধ্যক্ষের জন্য একটি করে মোবাইল ফোন কেনার বিধান থাকলেও প্রক্টর সাইফুদ্দীন কিনেছেন দুটি ফোন।
শুধু তাই নয়, কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা নিলে পণ্য কেনার পর তার বিল-ভাউচার বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়ে সমন্বয় করতে হয়। প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ এখন পর্যন্ত সেই সমন্বয় দেননি বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান মোবাইল ফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আসলে এ বিষয়ে জানি না। আমি রংপুরে এসেছি। বিস্তারিত জেনে বলতে হবে।’
সারাবাংলা/এআইএন/টিআর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি প্রক্টর ফোন কেনায় অনিয়ম সাইফুদ্দীন আহমেদ