হঠাৎ করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট সামরিক শাসন জারি করেছিলেন কেন?
৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৩
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে এই ঘোষণা জারি করার পরপরই তাকে এই সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) হঠাৎ করে এক টিভি ভাষণে সামরিক আইন জারি হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। পরদিন বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এই আইন প্রত্যাহারও করে নেন তিনি।
দেশটির পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট এই রায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আইনগতভাবে এই আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট। কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের বেশির ভাগ সদস্য ভোটে সামরিক আইনের ইতি চাইলে সরকারকে সেই আইন তুলে নিতে হবে।
সামরিক আইন জারির ঘোষণার পরে হাজার হাজার মানুষ এর প্রতিবাদে পার্লামেন্টের সামনে সমবেত হন। অন্যদিকে, বিরোধী আইন প্রণেতারা দ্রুত পার্লামেন্টে যান জরুরি ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য চাপ দেওয়ার জন্য।
ভোটে পরাজিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সামরিক আইন জারির আদেশ প্রত্যাহার করেন।
এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়া বিগত ৫০ বছরে এই প্রথম মার্শাল ল বা সামরিক আইন জারি করলে তাতে অবাক হন দেশটির মানুষজন।
ইওল মঙ্গলবার রাতের ঘোষণায় ‘রাষ্ট্র বিরোধী শক্তি’এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে,কোনো বিদেশী হুমকির কারণে নয়, বরং তার নিজের রাজনৈতিক সংকটের কারণেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ইউন সুক-ইওল ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। পিপল পাওয়ার পার্টি তার রাজনৈতিক দল। দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী লি জ-মায়ুংকে খুব কম ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ইওল।
এরপর নানা বিতর্ক এবং কেলেঙ্কারির কারণে প্রেসিডেন্ট ইওলের জনসমর্থন অনেক কমে এসেছে। তার স্ত্রীও কেলেঙ্কারিতে জড়িত। স্ত্রীর কেলেঙ্কারির জন্য ইওল গত মাসে ক্ষমাও চেয়েছেন।
এ সপ্তাহে ইওল সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা।
ইওল সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর সেনাবাহিনী পার্লামেন্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম। ইয়োনহাপ জানায়, জাতীয় পরিষদের সদস্যদেরকে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ওদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের আইনপ্রণেতাদেরকে দেশের আইনসভায় জড়ো হওয়ার ডাক দিয়েছে। দলের নেতা লি জে-মায়ুং জনতাকেও জাতীয় পরিষদে জড়ো হওয়ার ডাক দিয়েছেন।
সামরিক আইনের আওতায় একটি জরুরি পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন চালু হয়। বেসামরিক কর্তৃপক্ষ যখন কাজ করতে ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হয় তখনই জারি করা হয় মার্শল ল বা সামরিক আইন।
এই আইনের প্রয়োগে আইনগত কিছু প্রভাব পড়তে পারে। যেমন: স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার না থাকা কিংবা সামরিক আইন সম্প্রসারিত হওয়া। সামরিক আইন সাধারণত সাময়িক সময়ের জন্য জারি হলেও তা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ