‘ভারতের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে’
৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৩৫ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১৩
ঢাকা: জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিজেপি সরকার ও ভারতে অবস্থানকারী পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা শক্তি মিলে বাংলাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা রক্ষা করতে হবে। ভারতের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে জোরালো ও বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাম জোটের নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের সময় বাম জোটের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও সমন্বয়ক বাসদ (মার্কসবাদী) সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি নির্বাহী সভাপতি, আবদুল আলী, সিপিবির সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান।
বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি ভারতের আগরতলা, কলকাতা ও মুম্বায়ে অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে আক্রমণ ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বক্তব্য এসব ব্যাপারে আমরা তীব্র ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
তারা বলেন, সাম্প্রদায়িকতা এই উপমহাদেশেরই একটি সমস্যা। যা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। বিগত আওয়ামী লীগের আমলেও দেশব্যাপী হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, জমি দখল, মন্দির ভাঙচুর, এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তিন ধরনের শক্তির ভূমিকা ছিল। প্রথমত, সুযোগসন্ধানী শক্তি, যারা কোনো কিছু ঘটলেই সেখান থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। আরেকটি হচ্ছে, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি, যারা প্রমাণ করতে চায় গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে। তৃতীয়ত, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা সুযোগ পেলেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটায়। কিন্তু আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পর থেকে বেশিরভাগ ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রচার করে আসছিল। বিজেপি সরকার এটা ক্রমাগত সমর্থন করে গেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে ভারতের পতাকা অবমাননার যেসব ঘটনা ঘটছে, সেসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে ও পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালতে বিচারপতিকে ডিম নিক্ষেপ, চিন্ময় দাসের আইনজীবীকে আদালতে যেতে না দেওয়ার ঘটনা উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিকে উস্কানী হিসেবে কাজ করবে। যে কোনো ব্যক্তির ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। উক্ত ঘটনায় তা লঙ্ঘিত হয়েছে। এ বিষয়েও সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের পুরো বিষয় সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এলাকা, উপসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা দেশের জনগণকে সজাগ থাকার ও কোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এই বিভেদ ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের সবাইকে দাঁড়াতে হবে।
তারা আরও বলেন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। রামপালসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে। এছাড়া সীমান্তে হত্যা বন্ধ, তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সংগঠিত করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করে দেশ পরিচালনা করার পরামর্শ বামজোটের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তারা বলেন, কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগের যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এইচআই
গণঅভ্যুত্থান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাম গণতান্ত্রিক জোট বাসদ