ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০৫ | আপডেট: ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:২৩
ঢাকা: ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর ঘটনায় নিয়ে মনগড়া, মিথ্যা ও অপতথ্য দিয়ে তৈরি সংবাদ প্রচার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এক বিবৃতিতে বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তারা ভারতের মূলধারার মিডিয়ার এমন মনগড়া সংবাদ পরিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানান।
সংগঠন দুটির নেতারা বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী গোষ্ঠী ছাড়া এদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। তাদের একটিই লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।
তারা বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, এই ঘটনায় ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মনগড়া, মিথ্যা ও অপতথ্য দিয়ে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ভারতের বক্তব্য ও এর প্রেক্ষিতে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা, কলকাতা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপ হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ সময় নেতারা বলেন, আমরা মনে করি, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচার ছড়ানোর কারণেই ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, সিলেটের দিকে আসামে ভারতীয় সীমানা থেকে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন উগ্র বক্তব্য ও স্লোগানসহ সারা ভারতেই বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকায় নেমেছে সেখানকার উগ্রবাদীরা।
তারা বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তারা বলেন, ভারতে ভূয়া খবর এক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়েও দেশটির মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যাচাই-বাছাই না করেই বিভিন্ন ভুল খবর প্রকাশ করছে। ভূয়া খবর প্রকাশের তালিকায় আছে হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ইত্যাদির মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমও। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত ভূয়া খবর বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। বিজনেস ইনসাইডার ইন্ডিয়া-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফটের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভূয়া খবর ছড়ায় ভারতেই। মাইক্রোসফটের জরিপ অনুযায়ী, ৬০ শতাংশেরও বেশি অনলাইনে ভূয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন; যেখানে এ হারের বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট প্রতারণার শিকার হয়েছেন— যা বৈশ্বিক গড় ৫০ শতাংশের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তারা ফিশিং বা স্পুফিংয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। এ জরিপে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, অনলাইন বুলিং, অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন বার্তা, মিথ্যা তথ্য ও ভূয়া খবরসহ বিভিন্ন অনলাইন ঝুঁকির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, ভারত সরকারের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড এবং সেখানকার মিডিয়ায় ভূমিকা আমাদের মনে হয়েছে, তারা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। এতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানো সহজ হবে।
এসব ঘটনার পেছনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইন্ধন আছে বলেও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ হয় বলে নেতারা বিশ্বাস করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। কিন্তু ভারত সেটি রক্ষা করে চলছে না।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা আশা করব বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন। একই সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সঠিক সংবাদ প্রচার করবে। এটা উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন(বিএফইউজে) ভারত হাইকমিশনে হামলা