‘বৈষম্য ও আধিপত্য থেকে বের হতে পারলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে’
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:১৩ | আপডেট: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:৩৮
বৈষম্য ও আধিপত্য থেকে বের হতে পারলে তবেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, পারস্পরিক মতবিনিময় ও সহমর্মিতার মাধ্যমে আমরা বৈষম্য ও আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই। বাংলাদেশের শক্তির জায়গাটা হচ্ছে এই দেশের মানুষ কখনো হাল ছাড়ে না। স্বাধীনতার পরও বারবার এ দেশের মানুষ শোষণ, নিপীড়ন, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এ দেশে অভ্যুত্থান হয় ঠিক, কিন্তু বৈষম্য আধিপত্যের নিরসন হতে দেখা যায় না। এই বৈষম্য ও আধিপত্য থেকে বের হতে পারলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কার: সম্ভবনা ও সংকট’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আমাদের যে সংবিধান আছে সেখনে বৈষম্যবিরোধী কথাবার্তা অনেক আছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের ক্ষমতায় যে সব দল সরকারের ছিল তারা দেশের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। একেকটা সরকার এসেছে, নিজের রাজনৈতিক সুবিধামতো স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক সংবিধান সংশোধন করতে করতে সংবিধানটা বৈষম্যবাদী সংবিধান করে তুলেছে। রাজনৈতিক শক্তি যদি না থাকে জণগনের, যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা তৈরি না হয়, তাহলে শুধু সংবিধান আমাদের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশ বিপ্লবের দেশ। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ চব্বিশের ফ্যাসিস্টবিরোধী গণঅভ্যুত্থান আমরা দেখেছি। কিন্তু এতগুলো অভ্যুত্থানের পরও আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের প্রত্যাশিত রাষ্ট্র আমরা পাইনি।
তিনি বলেন, বাহাত্তরে আওয়ামী সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশে দুর্নীতি, কালোবাজারিসহ নানা অপকর্মের সূচনা করে গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় হাসিনা সরকার দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি উল্লেখ করে অধ্যাপক মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, বাজারে এখনো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়ছে না। কৃষি আমাদের সব থেকে বড় খাত। কিন্তু সেটি এখন অবহেলিত। সরকারের কৃষি ও শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। পুরো দেশ আমদানিনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে। জাতীয় পুঁজির বিকাশ করতে হবে। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার শুধু তার রুটিন ওয়ার্ক করেছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের ওপর কর্তৃত্ব খাটানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার যদি ভারতীয় কর্তৃত্ব বন্ধ করতে চায় তাহলে ভারতের পুঁজি বিনিয়োগ বন্ধ এবং তাদের সঙ্গে যেসব অসম চুক্তি আছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে আমরা চরম সম্ভাবনাময় সময় পার করছি। সেই সঙ্গে চরম সংকটেও অবস্থান করছি আমরা। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রোপাগান্ডা, আধিপত্যবাদ মনোভাবের কারণে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। কিন্তু একজন নাগরিক হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি দেশের প্রকৃত অবস্থা কী সেটা বুঝতে পারি। তারা যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে সেটা আমাদের ভেতরকার সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে পারবে না। দেশের স্বার্থে, দেশের প্রশ্নে আমরা সবাই একতাবদ্ধ। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র সংস্কার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ভারতের বিরুদ্ধে নতজানু মনোভাব ঝেড়ে ফেলে তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে।
অনুষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধির বোঝাপড়া পর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য রায় রিপন বলেন, চার মাস পর্যন্ত সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্ররা যখন অটো পাসের জন্য আন্দোলন করছে, তখন সরকার তাদের সঙ্গে আপসে যাচ্ছে। কিন্তু রিকশাচালকরা যখন দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে তখন তাদের প্যাডেল লীগ বলে ট্যাগ লাগানো হচ্ছে। অথচ আন্দোলনের সময় প্রায় ২৪-২৬ জন রিকশাচালক মারা গেছেন।
আদিত্য রায় রিপন আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আছে বলে আশ্বাস দেয়। অথচ সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দখলদারিত্ব শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের দখলদারিত্বের জায়গায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অবস্থান করে নিচ্ছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না, ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক জান্নাতুল নাঈম, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এস মাহমুদুল হক মিটু, মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কামরুল হাসান অভি, ছাত্র গণমঞ্চের আহবায়ক নাসিম মাহমুদ, ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক ওয়াজেদ শিশির অভি, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মেহেদী মারুফ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সামিন ত্রিপুরা এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল।
সারাবাংলা/টিআর
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আনু মুহাম্মদ গণতন্ত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাবি সেমিনার