ভূমি জরিপ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রস্তাব বাতিল
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০৬ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১১
ঢাকা : ভূমি জরিপ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাদ গেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব। সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এ খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর। অতি সম্প্রতি (২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পের আওতায় বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে প্রকল্পের নানা অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রকল্প সংশিষ্টরা।
জানা যায়, করোনা-উত্তর দেশের আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় গত কয়েক বছর ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণে বিধি-নিষেধের বিষয়টি এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভূমি জরিপ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের মূল প্রস্তাবে ৪০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত জুন পর্যন্ত এ খাতে কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। কিন্তু অতি সম্প্রতি প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে এ খাতে এক কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যে বিদেশ প্রশিক্ষণে সরকারিভাবে বাধা রয়েছে। অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। তাই এটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কেনাকাটা সরকারি বিধি অনুযায়ী সম্পন্ন করতে ৩ সদস্যের বাজারদর নির্ধারণ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, শেষ সময়ে এসে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২ বছর মেয়াদ এবং ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। ফলে তিন বছরে
বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকলেও এখন ৯ বছর লাগবে। সেইসঙ্গে বাড়তি খরচ যাবে মোট ৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এদিকে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত অগ্রগতি নেই।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রকল্পের আর অন্যান্য যেসব খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে দেশীয় প্রশিক্ষণ খাতে ১৪০ জনের বিপরীতে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এখন দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ১২ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ লাখ টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি (প্রতিষ্ঠান) কেনা বাবদ ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৭৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এসব খাতে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা ও প্রয়েজনীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
সভায় প্রকল্পটির বিষয়ে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- প্রকল্পের প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীর ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কার্যকর কোন এক্সিট প্ল্যান নেই। এটি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের কার্যক্রম টেকসই ও কার্যকর করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলমান রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা বা বছর ভিত্তিক পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেট ধরে প্রকল্পের অর্থনৈতিক বিশেষন নির্ধারিত অনুচ্ছেদে দেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রকল্পে সব পণ্য, কার্য ও সেবা কেনার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করে ক্রয় পরিকল্পনা গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে ৩ সদস্যের একটি বাজারদর নির্ধারণ কমিটি গঠন এবং এর প্রমাণ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে যুক্ত করতে হবে।
প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে,‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে প্রকল্পের মূল মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর। পরে দুই দফায় চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন নতুন করে ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রকল্পের শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় মোট খরচ হয়েছে ৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এটি মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ এবং মাল্টিপারপাস ভবন তৈরি করা। এছাড়া ছাত্রাবাস তৈরি, ছাত্রী নির্বাস নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ডরমেটরি নির্মাণ, বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি, প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি।
সারাবাংলা/জেজে/আরএস