‘৬ ডিসেম্বর এক অবিস্মরণীয় দিন’
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০৩
ঢাকা: স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এ দিনে দীর্ঘ ৯ বছরের রক্তস্নাত আন্দোলনের পর পতন ঘটেছিল স্বৈরশাসনের। এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পেশাগত বিশ্বস্ততা ও শপথ ভেঙে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্র নস্যাৎ ও সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সাংবিধানিক রাজনীতির পথচলা স্তব্ধ করেছিলেন। যে সাংবিধানিক রাজনীতি ছিল বহুদলীয় ও বহুমাত্রিক, যার সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। দীর্ঘ ৯ বছর আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের এই দিনে (৬ ডিসেম্বর) ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে মুক্ত হয়েছিল গণতন্ত্র। সেই অর্জিত গণতন্ত্রের চেতনায় আবারও ছাত্র-জনতা ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে।
তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছিল গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসানের পর আবারও গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পুনরুজ্জীবন এবং রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনার দুঃশাসনে খালেদা জিয়ার ওপর জেল-জুলুমসহ নানামাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছিল— এমন অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে অত্যাচার-নির্যাতনে জর্জরিত করা হয়েছিল। সারা দেশকে শ্বাসরুদ্ধকর কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। স্বৈরাচার এরশাদের দল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ বছর একত্রিত হয়ে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানুষের মৌলিক মানবাধিকারকে ক্রমাগতভাবে হরণ করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছিল। ৫ আগস্ট এই অপশক্তিকে প্রতিহত করে ছাত্র-জনতার বিপুল তরঙ্গ। এই পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান যেন না ঘটে সেজন্য গণতান্ত্রিক শক্তিকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
পৃথক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশবাসী গণতন্ত্রের স্বর্ণদ্বার অতিক্রম করে। শুরু হয় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। এ দিনে গণতন্ত্রের দুশমনেরা পরাজিত হলেও চুপ করে বসে থাকেনি। গণতন্ত্রের জাতশত্রু আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন চক্রান্ত শুরু করে। তাদের মিলিত শক্তি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী না করে বরং ক্রমাগত দুর্বল করতে থাকে। সর্বশেষ ২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার যৌথভাবে বাংলাদেশকে একদলীয় দুঃশাসনের অরাজকতার মধ্যে ঠেলে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘হাজারও শহিদের রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। একদলীয় শাসন ও একতরফা নির্বাচনের হাত থেকে এ দেশের জনসাধারণের মনে স্বস্তির ভাব ফুটে উঠেছে। মানুষ আশা করে— নাগরিক স্বাধীনতা আর কখনোই বিপন্ন হবে না, অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে।
‘কোনোভাবেই যেন আর ফ্যাসিবাদের উত্থান না হয়, দেশ যেন গুম-গুপ্তহত্যা আর ক্রসফায়ারের নিষ্ঠুর যাঁতাকলের মধ্যে পতিত না হয়, রাষ্ট্র-সমাজের সর্বত্র যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পায়, একদলীয় লুটেরা কর্তৃত্ববাদ আর যেন মাথাচাড়া দিতে না পারে, এর জন্য গণতন্ত্রকামী দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে,’— বলেন মির্জা ফখরুল।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
এরশাদ পতন দিবস তারেক রহমান মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বৈরাচার পতন দিবস