হাসন রাজা চলে যাওয়ার ১০২ বছর
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৪২ | আপডেট: ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৮
সুনামগঞ্জ: আজ ৬ ডিসেম্বর মরমী সাধক হাসন রাজার ১০২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন হাসন রাজা। হাসন রাজার গবেষণা,সাধনা ও শিল্পকর্ম ছিল গণ-কল্যাণমুখী। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত জমিদার এবং সুর সাধক। মরমি এই কবি নিজের সৃষ্টিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দাঁড় করিয়ে গেছেন। হাসন রাজার গান ও দর্শনে মিশে আছে বাংলার মাটি ও মানুষের ঘ্রাণ।
মরমী সাধক হাসন রাজার গানে সরল স্বাভাবিক ভাষায় উচ্চারিত হতো মানবতার চিরন্তন বাণী। তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক কবি।
১৯২৫ সালে দর্শন কংগ্রেসের সভায় ও পরবর্তীকালে লন্ডন হিবার্ট বক্তৃতায় হাসন রাজা সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘পূর্ব বঙ্গের একটি গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই। সেটি এই যে, ব্যক্তি স্বরূপের সহিত সম্মন্ধ সূত্রেই বিশ্বসত্য।’
হাসন রাজার গানের বিচিত্রতা লক্ষ্যণীয়। তিনি লিখেছেন প্রেমের গান যার মধ্যে জাগতিক প্রেম, আধ্যাতিক প্রেম, জগৎ সংসারের প্রেম অন্তর্ভুক্ত।
তার গানের প্রধান বিষয়বস্তু অনেকটা এরকম যে, এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন একটা স্বল্প সময়ের জন্য মাত্র। এখানে কেউই চিরস্থায়ী নয়। মানবিক বোধকে তিনি উচ্চ স্তরে স্থান দিয়েছেন যেখানে মমত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সংহতি এবং সহনশীলতাবোধের গভীর দিকদর্শন রয়েছে। সকল ধর্মের বিভেদ অতিক্রম করে তিনি গেয়েছেন মাটি ও মানুষের গান।
হাসন রাজার জন্ম লক্ষণশ্রীতে ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১)। শিশুকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই লক্ষণশ্রীই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। তাইতো তিনি গেয়েছেন—
‘কতদিন থাকিবায় লক্ষণছিরিরে হাসন রাজা
ও রাজা কতদিন থাকিবায় লক্ষণছিরি।
আখেরাতে যাইতে হইবে, একদিন মরিবে।
হাছন রাজা কতদিন থাকিবে লক্ষণছিরি।’
হাসন রাজার বাবা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন প্রতাপশালী জমিদার। হাসন রাজা তার তৃতীয় সন্তান। হাসন রাজার মায়ের নাম হুরমত বিবি।
বাবা ও মা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মরমী কবি হাসন রাজা।
জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের মতে, তিনি প্রায় ৫ লাখ ২৭ হাজার বিঘা জমির অধিকারী ছিলেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জের উল্লেখযোগ্য পরগণা: (পরগণা- এখনকার তিন থেকে চারটি ইউনিয়নের সমান প্রায়) লক্ষণশ্রী (বর্তমান সুনামগঞ্জ শহর ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা) মহারাম, অচিন্তপুর, লাউড়, পাগলা, পলাশ, বেতাল, চামতলা, কৌড়িয়া, কুরুয়া ইত্যাদি পরগণা ছিল তার দখলে।
১৮৬৯ সালে বাবা আলি রেজার মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তার বড় ভাই ওবায়দুর রেজা মারা যান। ভাগ্যের এমন বিড়ম্বনার স্বীকার হয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে হাসন রাজা জমিদারীতে অভিষিক্ত হন।
১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত ২০৬টি নিয়ে গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাসন রাজার তিনপুরুষ’এবং ‘আল ইসলাহ্’সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ধারণা করা হয়, তার অনেক গান এখনো সিলেট—সুনামগঞ্জের লোকের মুখে মুখে আছে এবং বহু গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
শহরের তেঘরিয়ার জন্মভিটায় হাসনরাজা মিউজিয়ামকে একটি পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম হিসেবে গড়ে তোলার দাবি পর্যটকসহ হাসনরাজা প্রেমিদের। একইভাবে তার সুরের বিকৃতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগের দাবি প্রত্যাশা করেন তার ভক্তরা।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ