Monday 09 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যেতে পারে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:০৭ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৫

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

ঢাকা: পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বেক্সিমকোসহ বড় বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে টাকা থাকলেও বাস্তবে তা দেশে নেই। সব টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। দেশের জনগণ ব্যাংকে টাকা রেখেছে। কিন্তু ব্যাংকের টাকা দেশে নেই। কিন্তু এই টাকা তো জনগণের।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চারদিনব্যাপী বার্ষিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট গাইন্ডারমিট এস গিল ‘দ্য মিডল ইনকাম ট্র্যাপ’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন

বিজ্ঞাপন

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সম্পদের অভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বৈষম্য কমাতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গরীব মানুষদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় বাড়াতে কর নীতিমালায় সংস্কার আনতে হবে। আমরা স্বল্পকালীন সময়ের জন্য এসেছি। তাই সব কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এখন সম্পদের সঙ্কটে আছি। ফলে বিভিন্ন খাতে কাঙ্খিত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারছি না।

আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যেতে পারে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার হয়তো দেখবে। তখন দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ করবো। কেউ বলছেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আবার কেউ বলছেন, এখনই নয়। আমি একসময় জাতিসংঘের এ কমিটিতে ছিলাম, আমরা যে অবস্থায় আছি, এতে এলডিসি উত্তরণের বিকল্প নেই। তবে আমরা যেটি করতে পারি, সেটি হলো- এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলেও উন্নত দেশগুলোকে বলতে পারি যে, আমাদের সক্ষমতা এখনো বাড়েনি। তাই রপ্তানি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ এবং জিএসপি প্ল্যাস সুবিধা যেন দেওয়া হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি না।

বিজ্ঞাপন

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের শিল্পগুলোকে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু কম মজুরি, নিম্ন প্রযুক্তি ইত্যাদি দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখলে হবে না। পাশাপাশি সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের মতো অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করে ভিয়েতনাম আজ অনেক দুর এগিয়ে গেছে। তারা ৩০/৪০টি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করেছে। আমাদের এখনো একটি দেশের সঙ্গেও এই এগ্রিমেন্ট হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত হতে না পারলে আমরা টেকসই উন্নয়ন করতে পারবো না।

বৈষম্য দূরীকরণে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮০ শতাংশ শিক্ষক নেই। আবার সাধারণ শিক্ষায় জেলায় জেলায় এমনকী উপজেলা পর্যায়েও বড় বড় অবকাঠামো হয়েছে। আমি জানি না, কবে কারিগরি শিক্ষার সঙ্কট কাটবে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এখাতে বরাদ্দ দিলে সেটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে। বলা হয়, বড় বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বানাতে হবে, ডায়ালাইসিস মেশিন কিনতে হবে। কিন্তু দেখা যায় যে, দক্ষ অপারেটরের অভাবে এসব যন্ত্রপাতি থাকলেও তা পড়ে থাকে। এখানে এক ধরনের ডিলেমা আছে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, জুলাই-আগষ্টের ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বৈষম্য বিরোধী মনোভাব আরো বড় হিসেবে তৈরি হয়েছে। সেই স্প্রিটকে সামনে রেখে বৈষম্য দূর করতে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

গাইন্ডার মিট এস গিল তার গবেষণাপত্রে বলেন, বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে আছে। প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ এই ফাঁদের শিকার। তারা সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এই মধ্য আয়ের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে মেধা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং পুঁজির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিক করতে হবে। উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় একটি মধ্যম আয়ের দেশে মন্দার সম্ভাবনা তিনগুন বেশি থাকে। মধ্য আয়ের দেশে এমনিতেই পুঁজি কম থাকে। আবার যা থাকে সেটিরও ব্যবহার হয় কম। এই মধ্য আয়ের ফাঁদ বৈষম্য তৈরি করে। মধ্য আয়ের দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কম করে। অপরদিকে জীবাশ্ম জ্বলানির ব্যবহার বেশি হয়। ফলে এসব দেশে কার্যন নিঃসরনের মাত্রা বেশি থাকে। এসব দেশে গবেষণা কম হয়। ফলে অর্থনীতিতে সৃজনশীলতা কম থাকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরী।

সারাবাংলা/জেজে/আরএস

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বিআইডিএস আন্তর্জাতিক সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর