মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনকে ‘দীর্ঘদিনের দমনপীড়নের ন্যায়বিচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং এটিকে ‘সিরিয়ার জনগণের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে দেয়া এক ভাষণে এটিকে ‘পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন ইতিহাস’ রচনা বলে বর্ণনা করেছেন।
বাইডেনের বক্তব্য
বাইডেন তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘অবশেষে আসাদ শাসনের পতন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের একটি মৌলিক কাজ। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্ত হলেও সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী জনগণের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের সুযোগ।’
রোববার (৮ ডিসেম্বর) হোয়াইট হাউস থেকে এক ভাষণে তিনি আরও বলেন, আসাদকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এই মুহূর্তে সিরিয়ার এবং পুরো অঞ্চলের জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা সিরিয়ার জনগণকে তাদের দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করব।’
তিনি সিরিয়ার নতুন শাসনব্যবস্থাকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো- জর্ডান, লেবানন, ইরাক এবং ইসরায়েলকে সহায়তার আশ্বাস দেন। তবে তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কঠোর ইসলামপন্থীদের নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘আমরা শুধু তাদের কথার ওপর নির্ভর করব না, তাদের কর্মকাণ্ডকেও মূল্যায়ন করব।’
বাইডেন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সম্ভাব্য উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইএস আসাদের পতন এবং যেকোনো শূন্যস্থান ব্যবহার করে আবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করবে।’
আল-জুলানির ভাষণ
এদিকে রোববার (৮ ডিসেম্বর) দামেস্কের ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদ থেকে দেয়া এক বিজয় ভাষণে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস এর প্রধান আল-জুলানি বলেন, ‘আমরা (সিরিয়ার জনগণ) এই দেশের প্রকৃত মালিক। এই দীর্ঘ সংগ্রামের পর আজ আমরা আমাদের প্রাপ্য পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আসাদের শাসন হাজারো নিরপরাধ মানুষকে বন্দি করেছে কোনো অপরাধ ছাড়াই। আজ তার জন্য কত মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কত মানুষ তাবুতে জীবনযাপন করেছে, কত মানুষ সমুদ্রে ডুবে গেছে।’
আল-জুলানি বলেন, ‘এই বিজয় সব সিরিয়ানের জন্য। আমরা সবাই এর অংশ।’ তবে তিনি দেশ গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘সিরিয়াকে ইসলামি জাতির জন্য একটি আলোকবর্তিকায় পরিণত করতে হবে।’
তিনি ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিশোধ না নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ইরানের সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারের সমালোচনা করেন।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। বাইডেন ও আল-জুলানি উভয়ই একটি নতুন ভবিষ্যতের আহ্বান জানালেও, এই উত্তাল সময়ে দেশটিতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।