রাজশাহীতে পৌষের আগেই তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৩০ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৩২
রাজশাহী: অগ্রহায়ণ শেষের পথে। পৌষ আসতে বাকি পাঁচ দিন। এর মধ্যেই শীত জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে। রাজশাহীতেও তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে দ্রুত। ভোরের শহর ঢেকে থাকছে কুয়াশার চাদরে। সূর্য উঠলেও রোদে নেই তেজ। দুপুর ১২টার আগে বাড়ছে না তাপমাত্রা। আবার দুপুর গড়াতে না গড়াতেই বিকেলের নরম রোদ বেয়ে নেমে আসছে শীত। সন্ধ্যা থেকে বইছে হিমেল হাওয়া। বর্ষপঞ্জিতে না এলেও তাই রাজশাহীতে এসে পড়েছে শীত।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার (৮ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া শনিবার ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শুক্রবার ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগের সপ্তাহের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬/১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকলেও গত কদিনের নিম্নমুখী প্রবণতায় শীতের তীব্রতা ছড়িয়েছে জনপদে।
আগের কদিন সকালে সূর্যের দেখা মিললেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত এর দেখা মেলেনি। সকাল থেকে ভারি ও হালকা যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হয়েছে। পথে-ঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চিরচেনা দৃশ্যও চোখে পড়ছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল মানুষের কষ্টও দৃশ্যমান।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এ রকম তাপমাত্রা দুয়েকদিনের বেশি থাকবে না। এই দুয়েকদিন কেটে গেলে ফের উষ্ণতা ফিরে আসবে। তবে এ মাসের শেষে শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে, তখন তাপমাত্রা নেমে যাবে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, আর ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এ ছাড়া তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। গত কয়েক বছরে একাধিকবার অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহের দেখা মিলেছে। ডিসেম্বরে অবশ্য মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাসই দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন কয়েকদিন তাপমাত্রা কমতে পারে। শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত কোথাও কোথাও কুয়াশা পড়তে পারে। তবে এখনই শৈত্যপ্রবাহের কোনো পূর্বাভাস নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এ মাসের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।’
শৈত্যপ্রবাহ না এলেও ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই শীত নিবারণ করতে এরই মধ্যে রাজশাহী নগরীর ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকান বসেছে। সেখানে ভিড় বাড়ছে মানুষের। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই গরম কাপড় কিনতে পারছেন না। ফলে নিম্ন আয় ও বিত্তহীনরা ভুগছেন শীতে।
সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকেই শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগও দেখা যায়নি। সম্প্রতি কেবল একটি সামাজিক সংগঠনকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে। এর বাইরে কোথাও কাউকে শীতার্ত মানুষের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সালাহ উদ্দীন আল ওয়াদুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখনো শীতবস্ত্র বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে জেলার সবখানেই তা বিতরণ করা হবে।’
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ উপজেলার হাসপাতালেও আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চাপ বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে শিশু রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী আসছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। এতে বাড়তি ভিড় দেখা যাচ্ছে সবখানেই।
স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ মানুষ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। থাকছে মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, হাঁচির মতো লক্ষণ। কারও কারও কাঁপুনি নিয়ে জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শারীরিক দুর্বলতাও দেখা দিচ্ছে। ডায়রিয়াসহ অ্যাজমা রোগীরা বেশি ভুক্তভোগী বলে জানা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ অ্যাজমার রোগী সংখ্যা বাড়ছে। বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ— দুই জায়গাতেই রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা রোগীদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় ফ্লুয়ের প্রকোপ বাড়ে। এবারও বেড়েছে। সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ এবং যাদের অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকিওলাইটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, এ সময়ে ফলমূলসহ গরম খাবার বেশি খেতে হবে। গরম কাপড় পরতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, যেন শরীর আবার ঘেমে না যায়। আর শরীরে শক্তি জোগায়— এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।
সারাবাংলা/ইআ/টিআর