ঢাকা : ‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতোমধ্যে আইনটির কয়েকটি ধারা ও উপধারা বা দফা সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। খসড়া প্রস্তাবের ওপর আগামী ৭ দিনের (১৯ ডিসেম্বর) মধ্যে নির্ধারিত ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের মতামত পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংশোধিতব্য আইনটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’ নামে অভিহিত হবে।
খসড়ায় গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ৫৬ নং ধারা)-এর ১৫টি ধারা (ধারা নং- ২, ৪, ৫, ৭, ৯, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৭, ১৯, ২৪, ৩৩, ৩৪ ও ৩৬) সংশোধনের প্রস্তাব করে কোন কোন ধারার উপধারা বা দফা বিলুপ্তি এবং কোন কোন ধারা বা দফা প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধারা-৪ এর উপধারা-১ প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, “গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর মাধ্যমে স্থাপিত গ্রামীণ ব্যাংক, যা ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’ থেকে উদ্ভূত, এমনভাবে বহাল থাকবে যেন তা এ আইনের অধীনে স্থাপিত হয়েছে।”
গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের ব্যাখা যুক্ত করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি থানার জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি কর্মসূচির আওতায় গৃহীত গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প; যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং এতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশগ্রহণ করে।
খসড়া সংশোধনীতে ধারা-৭ এর উপধারা ১ ও ১(ক) প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। এতে সরকারের বা সরকার পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত একক বা যৌথভাবে মোট শেয়ারের পরিমাণ হবে ৫ শতাংশ। অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ শেয়ায়ের মালিক হবে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা (শেয়ার হোল্ডার)। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ক্রমান্বয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়াবেন। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করলে ঘোষণার সময় পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের অনুপাতে লভ্যাংশ দেওয়া হবে।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে সদস্যদের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ বছর, পর পর দু’বারের বেশি কেউ পরিচালক হতে না পারা, পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক পরিচালকদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে বোর্ড কর্তৃক ৩ বা ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন ও এমডি’র বয়স সর্বোচ্চ ৬৫ নির্ধারণ, এমডি পদ ৩ মাস শূন্য থাকলে বোর্ডের সিদ্ধান্তে নিয়োগ এবং চেয়ারম্যান-এমডি’র পদত্যাগপত্র বোর্ড বরাবর দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া খসড়ায় আইনের ২ নং ধারায় ‘ভূমিহীন ব্যক্তি’র সংজ্ঞা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে- ভূমিহীন ব্যক্তি হবেন সেরূপ ব্যক্তি- যিনি বা যার পরিবার ৫০ শতাংশের কম চাষযোগ্য জমির মালিক; কিংবা যিনি বা যার পরিবার এরূপ স্থাবর ও অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তির মালিক যার মূল্য তিনি যে ইউনিয়নে বাস করেন সেই ইউনিয়নের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ১ একর চাষযোগ্য জমির মূল্যের অধিক নয়; বা যে পৌরসভায় বাস করেন সেখানকার বাজারদর অনুযায়ী ১৫ শতাংশ জমির দামের অধিক নয়; বা যে সিটি কর্পোরেশনে বাস করেন সেখানকার বাজারদর অনুযায়ী ২ শতাংশ জমির দামের অধিক নয়।