গণমাধ্যম সংস্কারে সম্পাদকদের মতামত চায় কমিশন
১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:১২
ঢাকা: রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কীভাবে জনগণের স্বার্থে কাজ করা যায় সে বিষয়ে মতামত দিতে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’। জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ব্যর্থতা ও বিতর্কিত ভূমিকার কারণে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তার পটভূমিতে গণমাধ্যম সংস্কারে কাজ করছে কমিশন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এবং সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ।
মতবিনিময় সভায় কামাল আহমেদ বলেন, ‘কমিশনের কোনো স্বার্থাণেষীর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই। অংশীজনের সুনির্দিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে কমিশন তার সুপারিশ তৈরি করবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার স্বায়ত্বশাসন নীতিমালা প্রণয়নেও কমিশন সব মহলের মতামত নেবে।’
নোয়াবের সভাপতি ও ‘দৈনিক সমকাল’র প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, ‘প্রকাশক হিসেবে আমরাও হুমকি ও ক্ষতির স্বীকার হয়েছি। করোনার সময় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেওয়া হলেও সংবাদপত্রকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।’ এ সময় কমিশন সম্পাদকদের স্বাধীনতার জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভায় নোয়াবের সদস্য ডেইলি স্টার প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘গণমাধ্যমের আইনগত কাঠামো ও পরিবেশ সবকিছু মিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিবেশ আমাদের নেই।’
আরেক সদস্য প্রথম আলোর প্রকাশক ও সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্র এখন আর সংবাদপত্র নাই। ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারিতে ব্যাপকভাবে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন আয় কমে গেছে। বিগত ১৫ বছর ও তার আগের সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে।’ অতীতের কোনো সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে পারেনি বলেও মত দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। তবে বিগত সরকার সংবাদপত্রকে শত্রু হিসেবে দেখেছে।’
নিউ এজের প্রকাশক শহিদুল্লাহ খান বলেন, ‘পত্রিকার মিডিয়া তালিকাভুক্তি পদ্ধতি রাখার প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার। প্রেস কাউন্সিলকে আধুনিকায়ন করা দরকার এবং এটিকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে হবে।’
দৈনিক বর্ণিক বার্তার প্রকাশক হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে সংস্কার কমিশনকে অন্য কোনো স্বার্থাণেষী গ্রুপ যেন ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে বহু সম্পাদক এখন মামলার স্বীকার, পলাতক এবং তাদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।’
দৈনিক সংবাদের প্রকাশক আলতামাস কবির বলেন, ‘রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকলেও স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব এবং তা নিশ্চিত করতে হবে।’ ‘দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড’র প্রকাশক মাসরুর রেজা বলেন, ‘সংবাদপত্র প্রকাশ ও অনুমতি ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়েছে।’ যা ভবিষতে বন্ধ করার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার জন্য তিনি কমিশনের প্রতি আহবান জানান।
সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফাহিম আহমেদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ, টিটু দত্ত গুপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বেগম কামরুন্নেসা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম