Wednesday 11 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আনাসের চিঠি পড়ে বিচার চাইলেন আবেগ আপ্লুত বাবা

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:২০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩৭

আনাসের বাবা।

ঢাকা: বিপ্লবে জেগেছে জনতা, এসেছে স্বাধীনতা। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেছে শেখ হাসিনা। উঠেছে নতুন সূর্য, পরিপূর্ণ হয়েছে কলকাকলি। তবুও ফেরেনি কিশোর আনাস…আনাসরা আর ফিরে আসবে না। চলে গেছে আনাস, রেখে গেছে কিছু স্মৃতি। এসব কথা বলেই আনাসের পরিচয় দিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা।

পরে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছেলে শাহরিয়ার খান আনাসের রেখে যাওয়া চিঠি পড়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বাবা। এ অবস্থায় সরকারের কাছে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার চান তিনি। একইসঙ্গে জুলাই গণহত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদেরও বিচার চান আনাসের বাবা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর স্বজনদের নিয়ে গঠিত মায়ের ডাক আয়োজিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আনাসের বাবা এই বক্তব্য দেন।

যা আছে চিঠিতে-

‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয় সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।’

বিজ্ঞাপন

বক্তব্য শেষে আনাসের বাবা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন আনাস। ওইদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পড়ার টেবিলের ওপর মাকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি লিখে বেরিয়ে যায়। সকালের নাস্তা করার জন্য ডাকতে গিয়ে দেখেন আনাস রুমে নাই। ছোটভাই এসে বলে, ভাইয়া ঘরে নেই। এরপর চোখে পড়ে আনাসের পড়ার টেবিলে থাকা একটি চিঠি।’

আনাসের বাবা বলেন, ‘ওইদিন বেলা ২টার দিকে আমার স্ত্রীর ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে বলেন। এরপর আমরা দুইজনই হাসপাতালে যাই। আনাসের মরদেহ মর্গে পাই। ডাক্তার জানান, তার বুকের ভেতর দিয়ে গুলি ভেদ করে চলে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, কোনো যানবাহন না পেয়ে একটি রিকশায় করে ছেলের মরদেহ নিয়ে নিজ এলাকা গেন্ডারিয়ায় যাই। এলাকার লোকজন আনাসের লাশ নিয়ে মিছিল করে। এরপর অপর আরেকজন শহিদের সঙ্গে একত্রে জানাজার নামাজ শেষে ওকে জুরাইন গোরস্থানে দাফন করি। অনেক চেষ্টা তদবির করার পর শেষ পর্যন্ত ৫ সেপ্টেম্বরের শহিদি মার্চে আনাসের মৃত্যু সনদ ও অন্যান্য ডকুমেন্ট সমন্বয়কদের হাতে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘শাহরিয়ার খান আনাসের মতো শত শত জীবনের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হলাম, আবারও ফিরে পেলাম স্বাধীনতা।’

সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই

শাহরিয়ার খান আনাস

বিজ্ঞাপন

‘আমরা চাই না সরকার ব্যর্থ হোক’
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর