Wednesday 11 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ জানুয়ারি সিপিবির ‘ঢাকা সমাবেশ’, আসবে নির্বাচনি টাইমফ্রেমের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২৭ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে শোষণ-নিপীড়ন-বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে নতুন বছরের শুরুতেই ‘ঢাকা সমাবেশ’ করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

মহাসমাবেশ থেকে নির্বাচনি টাইমফ্রেম, অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে যে বিকল্প শক্তি সমাবেশ ঘটাতে চায়, সে প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ঘোষণাও আসবে এ সমাবেশ থেকে।

বিজ্ঞাপন

আগামী ৩ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির এই ঢাকা সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। ওই দিন জেলা-উপজেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা লাল পতাকা নিয়ে হাজির হবেন সমাবেশে। দীর্ঘদিন পর সিপিবির এমন বড় কর্মসূচির সিদ্ধান্তে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া পড়েছে।

সিপিবির একজন নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারকে নির্বাচনি টাইমফ্রেম বেঁধে দেওয়ার জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারাও আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে নির্বাচনি টাইমফ্রেম বেঁধে দেওয়ার ব্যপারে অনেকটা একমত। সে অনুযায়ী, সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হলে সুনির্দিষ্ট কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’ নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি সিপিবির ওই নেতা।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোণলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা এরই মধ্যে চার মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি, এই অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুতসম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সরকার বলছে, সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রকাঠামোতে জরুরি সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে এসেছে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচনের কথা। তবে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। উপদেষ্টাদের বক্তব্য তাদের ব্যক্তিগত বলে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই।

সরকারের চার মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনি রোডম্যাপ না আসায় আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়ার মুখে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ অবস্থায় ঢাকা সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে সিপিবি বলছে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত জনতার বিজয়ের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এর জন্য কালক্ষেপণ না করে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

সিপিবির নেতাদের মতে, গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করতে পরাজিত শক্তি নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তিসহ দেশের ভেতরের বাংলাদেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক নানা শক্তি অপতৎপরতা চালাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী নানা ঘটনাও ঘটছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা, সাম্প্রদায়িক নানা অপশক্তির হামলা ও আস্ফালন, পালটা দখলদারিত্ব, নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে সরকারকে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রকৃত অর্থে জনগণের রাজনীতির কথা উল্লেখ করে সিপিবি বলছে, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি ও কাঠামো উপড়ে ফেলতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় শোষণ-নিপীড়ন-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগণের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। আর এই কাজটি করতে জনগণের প্রকৃত রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় শোষণ-নিপীড়ন-বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সংগ্রাম বেগবান করতে হবে। এ জন্য দেশের গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, বামপন্থি দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্য গড়ে তুলে বিকল্প শক্তি-সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকা সমাবেশ সামনে রেখে সিপিবি যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে—

  • অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে;
  • সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুসহ কালো টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে;
  • জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের দ্রুত বিচার এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসন করতে হবে;
  • নিত্যপণ্যের দাম কমাতে হবে, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করতে হবে;
  • বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে হবে, খেলাপি ঋণ আদায় করে দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;
  • মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, মন্দির-মাজারের ওপর আক্রমণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে;
  • সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা-দখলদারিত্ব রোধ করে জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
  • বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল এবং সংবাদপত্র, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে;
  • অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
    বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি উন্মুক্ত করতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে;
  • জাতীয় নিম্নতম মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত এবং শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে;
  • মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তুলতে হবে। ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজের ব্যবস্থা করতে হবে;
  • পাটকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ কল-কারখানা চালু করতে হবে;
  • সবার জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দলীয়করণ ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে;
  • সব ধরনের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং সবখানে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
  • পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
  • সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান করতে হবে; এবং
  • পতিত স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিহত করতে হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

ঢাকা সমাবেশ সিপিবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর