মরদেহ মাটিচাপার পর সিমেন্ট-বালুর ঢালাই দেয় আসামিরা
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১৯
ঢাকা: রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফেব্রিকস ব্যবসায়ী মো. নুর আলম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজ দোকানের এক কর্মচারী ও তার দুই বন্ধুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা জানিয়েছে, নুর আলমকে হত্যার পর তার কারখানাতেই দুই টুকরো করা হয়। এর পর কারখানার ভেতরে মাটিচাপা দেওয়া হয় এবং তার ওপর সিমেন্ট বালু দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন।
হত্যায় গ্রেফতার তিন হলেন- কর্মচারী মিরাজ মিয়া (২০), তার দুই বন্ধু শিপন ওরফে সম্রাট (২৫) এবং রিফাত (১৯)। তাদের স্বীকারোক্তিতে একটি হাতুড়ি, একটি কাঁচি ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের উপকমিশনরা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নূর আলম কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর ভান্ডারী মোড়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফেব্রিকসের ব্যবসা করতেন। গত ৬ ডিসেম্বর নূর আলম তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যাবেন বলে তার স্ত্রীকে ফোন করেন। এ সময় কয়েকজন লোকের সঙ্গে নূর আলমের কথা কাটাকাটি হয়। সেগুলো মুঠোফোনে শুনতে পান নূর আলমের স্ত্রী। এরপর নূর আলম নিখোঁজ থাকায় জামাতা মো. আতাউল্লাহ খান সজীব কামরাঙ্গীরচর থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর থানা-পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। পরে ওই কারখানা থেকে কর্মচারী মিরাজকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন কামরাঙ্গীরচরের ঝাউরাহাটি থেকে রিফাতকে এবং পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেফতার করা হয়।
উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে চারটা থেকে পৌনে পাঁচটার দিকে মিরাজ, রিফাত, শিপন ও পলাতক জিহাদসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিনজন মিলে নূর আলমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। পরে কারখানার শৌচাগারে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মরদেহ দ্বিখণ্ডিত করা হয়। নূর আলমের মৃতদেহ যাতে কেউ খুঁজে না পায়, সেজন্য সেটা গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহের খণ্ড দুটি পলিথিন ও কাপড় পেঁচিয়ে একটি বস্তায় ভরে ছাপাখানার ভেতরে টেবিলের নিচের মেঝে ভেঙে মাটিচাপা দেন তারা। পরে ওই জায়গাটি বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করেন।’
গ্রেফতার তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ফেব্রিকস কারখানার ভেতরের ঢালাই ভেঙে নূর আলমের দ্বিখণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান উপকমিশনার জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মরদেহের টুকরা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল নিহত নূর আলমের জামাতা আতাউল্লাহ খান সজীব বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘নূর আলম তার কর্মচারী মিরাজ মিয়াকে নিয়ে ফেব্রিকস কারখানায় থাকতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, প্রতি মাসে নূর আলম এক থেকে দেড় লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে যেতেন। ওই টাকা দেখে মিরাজের লোভ হয় এবং তা ছিনিয়ে নিয়ে নিতে তিনি তার দুই বন্ধুকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আসামিরা দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম