বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি, কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:১৮
সুনামগঞ্জ: শীত শুরু হতেই বোরো ধানের বীজতলায় পোকার আক্রমণ ও কোল্ড ইনজুরি শুরু হয়েছে। আর এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাওর অঞ্চলের কৃষকরা। অনেকেই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বীজতলায় কীটনাশক স্প্রে করছেন, অনেকে দিচ্ছেন সেচ। কেউ আবার সার দিচ্ছেন জমিতে। কিন্তু তাতেও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।
শনির হাওরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক জয়নাল মিয়া তার বীজতলায় কীটনাশক স্প্রে করছেন। তিনি জানান, পোকার আক্রমণ ঠেকাতে স্প্রে করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন ধরনের পোকা আক্রমণ করছে, তা তিনি বলতে পারেননি।
জয়নাল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি অফিসের লোকজনের কাছে গেলে তারা বলেন, কোল্ড ইনজুরিতে ধানের হালি চারা মারা যাচ্ছে। তাদের কথা অনুযায়ী ভোর বেলা বীজতলায় কুয়াশা ভেঙে দিচ্ছি, সেইসঙ্গে জমিতে সেচ ও সার দিচ্ছি। তার পরও বীজতলার ধানের হালি চারা মারা যাচ্ছে। এখন কীটনাশকের দোকান থেকে কীটনাশক কিনে এনে স্প্রে করছি।’
একই অবস্থার কথা জনালেন ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক মহসিন মিয়া। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসে গেলে কর্মকর্তারা কোল্ড ইনজুরির কথা বলে আমাদের সে বিষয়ে পরামর্শ দেন। আমরা সেভাবেই বোর ধানের বীজতলা পরিচর্যা করি। অনেক সময় সঠিক পরামর্শ পাই না। না পাওয়ায় আমরা দোকানিদের কাছে বলে অনুমাননির্ভর কীটনাশক এনে বীজতলায় দিই।’
জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ২৩টি ছোট-বড় হাওরের ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোর ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই বীজতলা তৈরি করছেন কৃষক। আগামী কয়েকদিনে মধ্যে এসব বীজতলা থেকে ধানের হালি নিয়ে জমিতে রোপন করবেন কৃষকরা।
ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাওরের টানের জমিগুলো রোপন করার উপযুক্ত সময় হয়েছে। কিন্তু বীজতলার হালি ধানের চারা কোনো কোনো জায়গায় ঝলসে গেছে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও চারা বাড়ছে না। সেজন্য নিয়মিত সেচ দিচ্ছি। কিন্তু সেটাও কোনো কাজে আসছে না।’
তাহিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী কীটনাশক বিক্রেতা সামায়ুন কবীর সারাবাংলা বলেন, ‘হাওরপাড়ের কৃষকরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসে। সে অনুযায়ী আমরা কৃষকদের কাছে কীটনাশক বিক্রি করে থাকি। বেশিরভাগ প্রেসক্রিপশনে মার্শাল, ভিরতাকো, নাইট্রো, মারশাল, ক্যারাটে, স্কোর, টিল্ট লিখে থাকেন তারা।’
তাহিরপুর উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকতা আসাদুজ্জামন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোল্ড ইনজুরির কারণে অনেক সময় বোর ধানের বীজতলায় গাছ মরে যেতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে কিছুদিন সকালে জমে থাকা কুয়াশার পানিটা সরিয়ে দিতে হয়। সেইসঙ্গে সেচ ও সামান্য লাল সার দিলে তা ঠিক হয়ে যায়। কৃষকরা এ সমস্যা নিয়ে আমাদের অফিসে এলে আমরা তাদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকি।’
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শোষক পোকা আক্রমণ করলে ধানের হালি চারা মরে পেঁয়াজ পাতার মত শুকিয়ে যায়। কীটনাশক স্প্রে করলে তার আর তেমন ক্ষতি হয় না । আমার কাছে বেশ কয়েকজন কৃষক এসেছেন, আমি তাদের সে অনুাযায়ী পরামর্শ দিয়েছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম