একক যাত্রার টিকিট সংকট, মেট্রোর গেট থেকেই ফিরছেন যাত্রীরা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:১৩ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৫
ঢাকা: মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকিট সংকট চরমে পৌঁছেছে। টিকিট সংকটের কারণে মূল প্রবেশ পথ থেকেই যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার প্রবেশ পথে টিকিট সংকটের নোটিশও ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। টিকিট সংকটের কারণে অধিকাংশ টিভিএম বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মাসেই নতুন ২০ হাজার কার্ড ( টিকিট) ইস্যু হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একক যাত্রার টিকিটের সংকট কাটাতেই নতুন এই কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। যদিও নভেম্বরে নতুন ২০ হাজার কার্ড স্টেশনগুলোতে যুক্ত হয়েছে।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছিলেন, মেট্রোরেলের দুই লাখেরও বেশি একক যাত্রার টিকিট যাত্রীরা সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ায় টিকিট সংকট দেখা দেয়। এই কার্ড সংকটে স্টেশনগুলোতে প্রায়ই বন্ধ থাকে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম)।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্ড সংকটের কারণে একেকটি প্রবেশ পথের তিনটি টিভিএম এর কখনো কখনো দুইটি বন্ধ রাখা হয়। আবার একটি বন্ধ দুইটি খোলা।
কর্মীরা জানান, একক যাত্রার কার্ড নেই তাই এই মেশিন চালানোর প্রয়োজন হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো স্টেশনে একক যাত্রার কার্ড না থাকায় শুধু এমআরটি পাস ও র্যাপিড পাসধারী যাত্রীদের মেট্রোরেলে চড়তে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মেট্রোরেলের সাধারণ যাত্রীরা।
মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনের সামনে কথা হয় ডা.আব্দুর রশীদ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে তার জরুরি মিটিং। কম সময়ে যেতে হবে বলে গাড়ি ছেড়ে মেট্রোতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। আবার স্থায়ী কার্ড নেয়া হয়নি অনেকটা খাম খেয়ালি করে।
তিনি বলেন, ‘এখন হাতেও সময় নেই, এসে দেখি কলাপসিবল গেটই ছোট করে খোলা রাখা হয়েছে। বলে একক যাত্রার টিকিট নেই।’
আরেক যাত্রী বিপুল হোসেন বলেন, তিনি চাঁদপুর যাবেন। ঢাকার বাইরে থাকেন বলে স্থায়ী পাসের প্রয়োজন হয়না। এখন একক টিকিট না থাকায় বিপদে পড়েছেন বলে জানান। অনেক যাত্রীকেই স্টেশনের কাছে গিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের মূল প্রবেশ পথের কলাপসিবল গেট সামান্য ফাঁকা করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাই নিরাপত্তাকর্মী ইমরান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একক যাত্রার টিকিট নেই বলে যাত্রীর চাপ কম। সেজন্য গেট বড় করে খোলা হচ্ছে না। তিনি গেটের ওপরে নোটিশ দেখিয়ে দেন। নোটিশে লেখা, ‘একক যাত্রার টিকিট স্বল্পতার কারণে শুধুমাত্র এমআরটি আর র্যাপিড কার্ডধারী যাত্রীরাই ভ্রমন করতে পারবেন।’
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল যখন চালু হয় তখন স্টেশনগুলোতে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪১টি একক যাত্রার কার্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক বছর ৯ মাস পর গত অক্টোবর মাসে জানানো হয় ২ লাখের বেশি একক যাত্রার কার্ড হারিয়ে গেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, যাত্রীরা অনেক কার্ড সঙ্গে নিয়ে গেছেন, আবার কিছু কার্ড নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তখন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে যাওয়া কার্ডগুলো যাত্রীদের ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানায়। এজন্য মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে একটি করে বক্সও দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে অক্টোবর মাসে কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ হাজার। যদিও তখন গড়ে প্রতিদিন এক লাখের বেশি যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করছিলেন। ফলে কার্ড সংকট আরও দৃশ্যমান হয়। পরে সংকট মোকাবিলায় ডিএমটিসিএল নতুন করে একক যাত্রার কার্ড সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।
নতুন উদ্যোগে ৪ লাখ নতুন কার্ড অর্ডার করা হয় জাপানে। এর মধ্যে প্রথম ২০ হাজার কার্ড গত নভেম্বর মাসে দেশে আসে।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কার্ড কিছু আছে। তবে সমস্যা হলো ধরুন আমাদের চাহিদা ১০০০ দিতে পারছি ৫০০ কার্ড।’
সারাবাংলা/জেআর/এসডব্লিউ